চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বান্দোয়ানে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর, আতঙ্কে পালালেন চিকিৎসকেরা
শিশু মৃত্যুর জেরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা হল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধর, দু’টি গাড়িতে ভাঙচুরও করা হয়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত ব্লক মেডিক্যাল অফিসার-সহ দুই চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে রাতের অন্ধকারে ‘পালিয়ে’ গেলেন। আবাসন থেকে পরিবারের লোকেদেরও তাঁরা সরিয়ে নিয়ে যান। শনিবার রাতে বান্দোয়ান ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকা ২৩ জন রোগী এক চিকিৎসক ও এক নার্সের ভরসায় রাত কাটালেন। রবিবার পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিশিকান্ত হালদার ‘পালিয়ে যাওয়া’ দুই চিকিৎসককে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এই ঘটনায় পুলিশ রাতেই ১০ জনকে গ্রেফতার করে। রবিবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ানের চিলা গ্রামের বাসিন্দা নির্মল দে’র ন’মাসের ছেলে সায়ন ডায়েরিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। শনিবার দুপুরে তাকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ শিশুটি সেখানে মারা যায়। পরিবারের সদস্যেরা অভিযোগ তোলেন, চিকিৎসার গাফিলতিতে তার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গোলমাল শুরু হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা ইট-পাটকেল ছোড়ে। কয়েকশো মিটার দূরের বান্দোয়ান থানা থেকে পুলিশ এসে প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়। শিশুটির বাবা নির্মলবাবু থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির একটি অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু গোলমাল থামেনি। বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশের সামনেই বেপরোয়া হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
বান্দোয়ানের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবিনাশ বেসরার অভিযোগ, “একদল বাসিন্দা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ধুরমল কিস্কুর উপর চড়াও হয়। তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। ইট পাটকেল ছুড়ে নতুন ভবনের দরজা জানালার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। নার্সদের ডিউটি রুমেও যথেচ্ছ পাথর ছোড়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে আমরা বাথরুমে আশ্রয় নিই। পুলিশকে ফোন করে খবর দিই।” ধুরমলবাবুর অভিযোগ, “হামলাকারীরা আমাদের মারধর করে বেরিয়ে যায়। তারপরে আমাদের কোয়ার্টারে হামলা চালায়। লাঠি ও ইটপাটকেল ছুড়ে আমার দু’টি গাড়ির কাচও ভেঙে দেয়। একটি গাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। সেই সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের হঠিয়ে দেয়।”
এই ঘটনার পরেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরের আশপাশে হামলাকারীরা থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সাহায্য নিয়ে অবিনাশবাবু ও ধুরমলবাবু পরিবারের লোকেদের কোয়াটার থেকে বের করে নিয়ে গাড়িতে করে বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যান। সেই সময় হাসপাতাল চত্বরে বিদ্যুতের ‘মেন স্যুইচ’ অফ করে অন্ধকার করে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্বে থেকে যান অপর চিকিৎসক জয়দেব সরেন, এক নার্স ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। জয়দেববাবু বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চত্বর অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছিল। কোয়ার্টার থেকে মহিলা ও শিশুদের উদ্ধার করতে না পারলে আরও বড় অঘটন ঘটে যেত।” চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই আতঙ্কে রাত কাটান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকা রোগীরা। স্থানীয় বাসাবুরু গ্রামের রানি মাণ্ডি, পাঁইসাগড়্যা গ্রামের সরমা সরেনরা বলেন, “ঘণ্টা দু’য়েকের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে গন্ডগোল চলছিল। তাই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ফের যদি হামলা হয়, এই আশঙ্কায় সারা রাত আমরা চোখের পাতা এক করতে পারিনি।” হাসপাতাল চত্বরে অবশ্য পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী ও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ সন্ধ্যাতেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে এত বড় ঘটনা এড়ানো যেত। তাঁরা এ জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার সুনীল কুমার চৌধুরী বলেন, “এ অভিযোগ ঠিক নয়। হামলায় জড়িত ১০ জনকে শনিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত আরও কয়েক জনের সন্ধান করা হচ্ছে।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বাসিন্দাদের বিক্ষোভের সুযোগে একদল দুষ্কৃতী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। নতুন ভবনে ও কোয়ার্টারে তারা ভাঙচুর চালায়। পরিকল্পনা মাফিক হামলা হয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতি থাকলে আলাদা ভাবে তদন্ত করা হবে।” সহকারি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কে পি সর্দার বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”

ছবি: সমীর দত্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.