রাজ্যে হবে জিনতত্ত্ব চর্চার গবেষণাগার |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
এ রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় গবেষণার দৈন্যের কথা বারবার আলোচিত হয়। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে আক্ষেপ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। সেই অভাব মেটাতেই এ বার রাজ্যে চালু হতে চলেছে ‘বায়ো-মেডিক্যাল জেনোমিক্স সেন্টার’। জিনতত্ত্বের গবেষণায় এই কেন্দ্র নতুন দিশা দেখাবে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা। কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্যে এসএসকেএমে তৈরি হবে এই গবেষণাকেন্দ্র। আর এর ল্যাবরেটরিটি তৈরি হবে প্রায় বন্ধ হতে বসা পিজি পলিক্লিনিকে। আগামী সোমবার এই কেন্দ্রের পরিচালন কমিটির প্রথম বৈঠক বসতে চলেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্পের জন্য ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতর, এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইআর) এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি চালু হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, মানের সঙ্গে তাঁরা কোনও আপস করবেন না। তাই বেছে বেছে সেরা ছেলেমেয়েদেরই নেওয়া হবে।
এ রাজ্যে চিকিৎসার সঙ্গে গবেষণার যোগসূত্র না থাকার অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। বহু ক্ষেত্রে আগ্রহের অভাব থাকলেও পরিকাঠামোর সমস্যাও যে বড় বাধা, তা মেনে নেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। রাজ্যে গবেষণার উল্লেখযোগ্য জায়গা নেই বললেই চলে। এমনকী, দেশের এক সময়ের অন্যতম প্রধান গবেষণা কেন্দ্র কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-ও ধুঁকছে। কল্যাণীতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়ো-মেডিক্যাল জেনোমিক্স’ গড়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু রাজ্যের নিজস্ব কোনও কেন্দ্র সে ভাবে তৈরি হয়নি, যেখানে এখানকার গবেষকেরা আন্তর্জাতিক মানের কাজের সুযোগ পাবেন। অথচ ‘জেনোমিক্স’ বিষয়টি ক্রমশ চিকিৎসা শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠছে। নতুন এই কেন্দ্রটি তৈরি হলে জিনতত্ত্ব সংক্রান্ত গবেষণার রাস্তা অনেকটাই খুলে যাবে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রের জন্য নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে চলেছেন তাঁরা।
কী ধরনের গবেষণা হবে এই কেন্দ্রে? সুশান্তবাবু জানান, গর্ভস্থ ভ্রূণের অসুখ থাকলে কী ভাবে নির্ণয় করা যায়, সেই সংক্রান্ত গবেষণা থেকে শুরু করে ফামার্কো জেনোমিক্স অর্থাৎ, জিনের ম্যাপিং করে কোনও ব্যক্তির দেহে কোনও বিশেষ ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, জানার চেষ্টা হবে। ফলে বহু জটিল রোগের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঠেকানো যাবে বলে তাঁর দাবি। এই কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিটি তৈরি হবে পিজি পলিক্লিনিকে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “বহু দিন ধরেই পিজি পলিক্লিনিক ধুঁকছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির বাধায় বহু প্রকল্প সেখানে শুরু করতে চেয়েও করা যায়নি। বর্তমান সরকার গোড়া থেকেই এই প্রকল্প সম্পর্কে উদ্যোগী ছিল। যে জায়গা পড়ে নষ্ট হচ্ছিল, এত দিনে তার সদ্ব্যবহার হতে চলেছে।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যেরা অবশ্য জানিয়েছেন, পিজি পলিক্লিনিকে কোনও প্রকল্পেই তাঁরা বাধা দেননি। এ বার জেনোমিক্স সেন্টার হলেও তাঁরা স্বাগতই জানাবেন। |