বন্ধের দিন জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে শিলিগুড়িতে তিনটি কনট্রোল রুম খুলে আসরে নামবে প্রশাসন। রবিবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই কথা জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি এদিন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। মন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিস, শিলিগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিস এবং শিলিগুড়ি মহকুমাশাসকের অফিসে কনট্রোল রুম খোলা হবে। কনট্রোল রুমের ফোন নম্বর জানিয়ে করা হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী নিজে রাস্তায় থাকবেন। তাঁর মোবাইলেও যোগাযোগের সুযোগ থাকবে। উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষের তরফে ৫টি কনট্রোল রুম খোলা হবে। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের চারদিকে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সময় বন্ধ ডেকে তা থমকে দেওয়ার চেষ্টা আমরা মেনে নেব না। কর্মনাশা বন্ধ রুখতে শিলিগুড়ির সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি। তিনটি কনট্রোল রুম খোলা হবে। আমি নিজেও রাস্তায় থাকব। মানুষের সাহস যোগানোর জন্য তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় থাকবেন। কেউ কোনও অসুবিধেয় পড়লে আমরা সাহায্য করব। |
প্রয়োজনে অতিরিক্ত সরকারি গাড়ি রাস্তায় নামানো হবে।” আজ, সোমবার বন্ধের বিরোধিতায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে মন্ত্রী বৈঠক করবেন। এ দিকে, এদিন ধর্মঘটকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ডুয়ার্সে বৈঠক করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিন মন্ত্রী চা বাগানগুলিতে ধর্মঘট রোখার জন্য আর্জি জানান। তিনি বলেন, “চা বাগানগুলি দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। প্রচুর শ্রমিক না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন। চা বাগানের অনেক কিশোরী পাচার হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তনের পর সেই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে আমরা চা বাগানগুলি ঠিক করার চেষ্টা করছি। সেখানকার কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বন্ধ করে এই ধারা রুখে দেওয়ার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।” শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফেও বন্ধের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে। তবে তাঁরা কাউকে দোকান খোলা রাখা বা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেবেন না। ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “যে কোনও রকমের বন্ধের আমরা বিরোধী। তবে ওইদিন কোনও ব্যসায়ীকে দোকান খোলা রাখা বা বন্ধ রাখার পরামর্শ আমরা দেব না। সেটা ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।” অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বাসু বলেন, “আমরা চাই না এ ধরনের বন্ধ হোক। যাঁরা বন্ধ ডেকেছেন তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি পর্যটন শিল্পকে আওতার বাইরে রাখা হোক। বন্ধে বিদেশি পর্যটকরা বিপাকে পড়তে পারেন। জরুরি পরিষেবার মতোই পর্যটকদের ছাড় দেওয়া দরকার।” কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান রামগোপাল জাজোদিয়া বলেন, “বন্ধ শিল্পে ক্ষতি করে।” বন্ধের দিকে লক্ষ রেখে ২৮ ফেব্রুয়ারির মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওইদিন বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। মন্ত্রী জানান, যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে সেগুলিতে যাতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয় প্রশাসন সেদিকে নজর রাখবে। এ ছাড়া ব্যাঙ্ক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যপারে প্রশাসন সহযোগিতা করবে। শীতের ছুটি কাটিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গিয়েছে। বাইরে থেকে ছাত্রছাত্রীরা পাহাড়ে ফিরছেন। এ সময়ে বন্ধে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। ধর্মঘটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নানা সংগঠন নেতৃত্বের বৈঠক করেন। তাতে ধর্মঘটের দিন ৫১০টির বেশি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও ১০০টি বাস তৈরি রাখা হবে। নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বাড়তি বাস চালানো ও কন্ট্রোল রুম খোলার বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে।” |