একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন ভৌমিককে মারধরের অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযগ দায়ের হয়েছে, সেই মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী তথা যুব কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় সাহা গ্রেফতার না-হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রবিবার বাসিন্দাদের তরফে বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকেও জানানো হয়। উদ্বিগ্ন মন্ত্রী জানান, তিনি বিশদে খোঁজখবর নেবেন। মন্ত্রী বলেন, “সুমন আমার বিধানসভা এলাকার মধ্যেই থাকে। আমি ওদের বাড়িতে যাব। সঞ্জয়কেও আমি চিনি। ওঁর সঙ্গেও কথা বলব।” দু-তরফের বক্তব্য জানার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন বলে মন্ত্রী বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, “দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শনিবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত এলাকার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দেবশঙ্করবাবুর ভাই সঞ্জয়বাবুর মোবাইলের দোকান রয়েছে। সেখানে মোবাইল চুরির সময়ে তিন ছাত্র ধরা পড়ে বলে অভিযোগ। তাদের আটকে রাখতে দেখে সহপাঠী সুমন গিয়ে খোঁজখবর নেন। সেই সময়ে সুমনকে সঞ্জয়বাবু মারধর করেন বলে অভিযোগ। সুমনকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সুমন বাড়ি ফিরেছে। সুমনের বাবা সত্যেনবাবু বলেন, “আমার ছেলেকে বিনা কারণে মারধর করা হয়েছে। পুলিশকে সব জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।” সুমনের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সঞ্জয়বাবু ও তাঁর দাদা দেবশঙ্করবাবু। সঞ্জয়বাবু বলেন, “দোকানে মোবাইল চুরি করে পালানোর সময়ে যাদের ধরা হয় তাদের ছাড়তে গেলে স্থানীয় লোকজন সুমনকে বকাঝকা করেছেন। তাঁদের কেউ ওঁকে মেরে থাকতে পারেন। আমাকে দোষী করা হচ্ছে।” সুমন যে এলাকায় থাকে, সেই ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর অতুল দাস সরাসরি ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। কে মারধর করেছে তা আমি জানি না। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবশঙ্কর সাহা বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমার এখানে এসেছিলেন। আমি ওই ছাত্রের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আইনের মাধ্যমেই যাওয়ার কথা বলছেন।” কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার সভাপতি শঙ্কর মালাকার বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “যতই অন্যায় করুক, ওই ছাত্রকে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। আমাদের নেতাদের সংযত হওয়া উচিত।’’ শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ঘটনার কথা শুনে আমি সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করি। শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ঘটনার কথা শুনে আমি সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ওই ছাত্রকে মারধর করেননি বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু মামলা হয়েছে তাই কিছু বলতে চাই না। আইন আইনের পথেই চলুক।” পাশাপাশি, দেবশঙ্করবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। তা হয়নি। আমরা আইনের মাধ্যমেই লড়াই করব।” এদিকে, জলপাইগুড়ি জেলা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতে বসে অভিযুক্ত তিন ছাত্র জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর বেলায় তারা মোবাইলের দোকানে যায়। তিন বন্ধুর মধ্যে একজন দোকানের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি দু’জন পুরোনো মোবাইল কিনতে দোকানে ঢোকে। একটি মোবাইল পছন্দ হয়। সেই মোবাইল হাতে করে একজন দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুকে দেখাতে নিয়ে যায়। সে সময়েই দোকান থেকে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করে তাদেরকে মারধর করা হয়। এক অভিযুক্ত ছাত্রের মা শুভ্রা সাহা বলেন, “ওদের বিনা দোষে মারধর করে জেলে পুরে দেওয়া হল। আর যারা ওদের মারধর করল তাদের নামে অভিযোগ থাকা সত্বেও পুলিশ কিছুই করল না। আমরা সুবিচার চাই।” এ দিন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চট্টাপাধ্যায় জেলা আদালতে গিয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। সৈকত বাবু বলেন, “পুলিশের অভিযোগ দেখেছি। অভিযুক্ত ছাত্রদের থেকে একটি মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। চুরির ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। বাকি বিষয়টি সাংগঠনিক স্তরে খোঁজখবর নেব।” প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসলাম খান বলেন, “এই ঘটনায় কে বা কারা রাজনৈতিক রং জড়াতে চাইছেন, জানি না। সঞ্জয়বাবুর মোবাইল দোকান রয়েছে। যা হয়েছে সবই ব্যবসায়িক স্তরে হয়েছে। তাঁর দোকানে চুরি হয়েছে এটাও সত্যি। সাংগঠনিক যোগাযোগ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে দলীয় পর্যায়ে তদন্ত হবে।” |