|
|
|
|
ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে বাস থামিয়ে যাত্রী ‘অপহরণ’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
চালকের মাথায় পিস্তল ধরে দিনদুপুরে জঙ্গল-রাস্তায় বাস থামিয়ে এক যাত্রীকে নামিয়ে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা। তাদের ছোড়া গুলিতে জখম হলেন বাসের ছাদে থাকা দুই যাত্রী। রবিবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের পূর্ণাপানি এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ঘটনাটি ঘটে। ‘অপহৃত’ যাত্রীর পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।
মাওবাদী-উপদ্রুত ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে যৌথ বাহিনী। পরে মোহনপুরের জঙ্গল এলাকা থেকে একটি পরিত্যক্ত মোটরবাইক উদ্ধার হয়। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসের এক যাত্রীকে অপহরণ করেছে দুষ্কৃতীরা। তবে তাঁর খোঁজ মেলেনি। কারা-কেন এই ঘটনা ঘটাল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।”
গুলিবিদ্ধ দু’জনকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহতেরা হলেন নীলু ভুঙ্গে ও স্বপন দণ্ডপাট। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মধুবাটি গ্রামের বছর চল্লিশের নীলুবাবু নিম পাতার ব্যবসা করেন। এ দিন গোপীবল্লভপুর থেকে বাসের ছাদে চাপেন তিনি। যাচ্ছিলেন খড়্গপুরেউলুবেড়িয়া ফেরার ট্রেন ধরতে। বছর আঠারোর স্বপনের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াবেড়ার ধডাঙরি গ্রামে। খড়্গপুরে পিসির বাড়ি যাচ্ছিলেন স্বপন। |
 |
জখম যাত্রী স্বপন দণ্ডপাট |
পুলিশের অনুমান, এক যাত্রীকে অপহরণের মতলবেই বাসটি থামানো হয়েছিল। বাসের পিছনের দিকে বসে থাকা বছর সাঁইত্রিশ-আটত্রিশের ওই যাত্রীর পরনে প্যান্ট-শার্ট, মাথায় টুপি ছিল। দোহারা চেহারার ওই যুবককে দুষ্কৃতীরা নামিয়ে নিয়ে চলে যায়। ওই যাত্রী ফাঁসিতলা থেকে বাসে উঠেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন চালক-কনডাক্টর ও কয়েকজন যাত্রী।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই এলাকায় সন্ধ্যার পরে পথ-ডাকাতদের উপদ্রব বাড়ে। এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে।” বিধানসভা ভোটের আগে মাওবাদী এবং জনগণের কমিটিরও ‘বাড়বাড়ন্ত’ ছিল ওই এলাকায়। তাদের কি কোনও ‘ভূমিকা’ রয়েছে এই ঘটনায়? ওই পুলিশ-কর্তার জবাব, “কোনও সম্ভাবনাই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ নয়াগ্রামের ধুমসাই থেকে মেদিনীপুরগামী বাসটি ঝাড়গ্রামের ফাঁসিতলা ছাড়ার পরেই ঘটনাটি ঘটে। চালক দেবাশিস সেন ও কনডাক্টর চন্দন ঘোড়ই পুলিশকে জানিয়েছেন, যাত্রী সেজে বাসে থাকা এক যুবক আচমকা উঠে এসে দেবাশিসবাবুর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাস থামায়। বাসের চাবিও কেড়ে নেয়। পিছন থেকে দু’টি মোটরবাইকে চেপে আরও চার যুবক বাসের পথ আটকে দাঁড়ায়। এর পরে ওই যুবকেরা বাসের পিছনের আসনে বসে থাকা ওই যাত্রীকে টেনে নামায়। যাত্রী, বাসকর্মীদের ভয় দেখাতে শূন্যে এলোপাথাড়ি কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে তারা। সেই গুলিতেই জখম হন বাসের ছাদে থাকা দু’জন। পরে ওই যাত্রীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে পাঁচ যুবক মোহনপুরের জঙ্গলের দিকে চম্পট দেয়। |
 |
গুলিতে আহত যাত্রী নীলু ভুঙ্গে। |
বাসের ছাদে ছিলেন নীলুবাবুর ভাইপো বলাই ভুঙ্গে। তিনি বলেন, “ফাঁসিতলা থেকে দু’টি মোটরবাইক বাসের পিছনে আসছিল। পূর্ণাপানির কাছে মোটরবাইক দু’টি ওভারটেক করে এগিয়ে যায়। বাস থেমে যায়। ছাদে থাকায় কিছুই বুঝতে পারিনি। আচমকা পটকা ফাটার মতো শব্দ। দেখি, কাকার শরীর রক্তে ভিজে যাচ্ছে। কাকার ডান কাঁধে গুলি লাগে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলুবাবুর ডান কাঁধ ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বপনের বাঁ হাতে গুলি লেগেছে। তিনি বলেন, “রাস্তার ধার থেকে একটা ছেলে গুলি ছুড়ছিল। ভয়ে মাথা নিচু করে বাসের ছাদে শুয়ে পড়ি। হঠাৎ বাঁ হাতে যন্ত্রণা শুরু হয়। দেখি, রক্ত ঝরছে।”
বাসের খালাসি দোল টিকাদার বলেন, “আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাসের দরজা খুলতে বলছিল বাসের ভিতরে থাকা যুবক। ও ডাকাত ভেবে নিজের মোবাইল লুকোতে যাচ্ছিলাম। যুবকটি বলে, ‘ভয় নেই কারও কিছু নেব না। যা পাওয়ার ছিল, তা আমরা পেয়ে গিয়েছি।’
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
|
|
 |
|
|