সম্পাদকীয় ২...
নিদ্রার অধিকার
ঘুমানোর অধিকারকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার রূপে শনাক্ত করিয়া সুপ্রিম কোর্ট ইহাকে জীবনের অধিকারের পরিসরভুক্ত করিয়াছে। সুস্থ মন ও শরীরে জীবনযাপনের জন্যও ঘুম অত্যাবশ্যক। সহসা কাহাকেও ঘুম হইতে ডাকিয়া তুলিলে যে তাঁহার কষ্ট হইতে পারে, মাননীয় বিচারপতিগণ তাহাও গুরুত্ব সহকারে খেয়াল করিয়াছেন। রামলীলা ময়দানে ‘বাবা রামদেব’-এর ডাকে জড়ো হওয়া লোকেদের ঘুমের মধ্যে পুলিশ তুলিয়া থানায় লইলে কিংবা নিগ্রহ করিলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহার সূত্রেই শীর্ষ আদালতের এই রায়। নিদ্রাকাতর মানুষেরা এই রায়ে আশ্বস্ত হইবেন। বিচারপতিরা অবশ্য এই অধিকার প্রয়োগকেও শর্তসাপেক্ষ করিয়াছেন। মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াই প্রশ্ন তোলা যায় ঘুমের অধিকারকে কি জীবনের অধিকারের সমার্থক বলা যায়? নিদ্রা কাড়িয়া লওয়া এক অর্থে জীবন কাড়িয়া লওয়ার শামিল, সে কথা সত্য। বাল্মীকি হইতে শেক্সপিয়র, মহাকবিরা তাহা জানাইয়াছেন। কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ ছিল তাঁহার মৃত্যুর অনিবার্য প্রস্তুতি। আর, নিদ্রিত রাজা ডানকানকে হত্যা করিবার পরে ম্যাকবেথ অশরীরী কণ্ঠে শুনিয়াছিলেন সেই হাড়-হিম-করা উচ্চারণ যে ‘নিষ্পাপ নিদ্রা জীবনের পরিচর্যা করে’, তিনি সেই নিদ্রাকে হত্যা করিয়াছেন, অতঃপর তাঁহার জীবন হইতে নিদ্রা চলিয়া যাইবে। সেই ‘বাণী’ প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর অভিশাপ। কিন্তু রূপকার্থ অনুসরণ করিয়া চলা কি আদালতের পক্ষে বিধেয়?
প্রশ্নটি গুরুতর। সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অধিকারকে জীবনের অধিকারের অঙ্গ হিসাবে দেখিতে চাহিয়াছে। যেমন খাদ্যের অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি। নিদ্রার অধিকার সেই ধারাতেই নূতন সংযোজন। বৃহৎ অর্থে এই সকল অধিকারই নিশ্চয়ই পরিপূর্ণ জীবন যাপনের শর্ত। কিন্তু সংবিধানে মৌলিক অধিকারের যে ধারণা নির্দিষ্ট হইয়াছিল তাহার অর্থ অতিমাত্রায় প্রসারিত করিলে তাহার গুরুত্ব হারাইয়া যাইতে পারে। মৌলিক অধিকারের স্বাতন্ত্র্য এইখানেই যে তাহা কোনও অবস্থাতেই লঙ্ঘন করা যাইবে না। শিক্ষা বা কাজ বা পুষ্টি বা নিদ্রার দাবিও এই পরিসরের অন্তর্ভুক্ত করিলে এই অবশ্যপালনীয়তার শর্তটির মর্যাদা রক্ষা করা কঠিন হইবে। তাহা কিন্তু সংবিধানের পক্ষে গৌরবের নয়, সম্ভবত সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষেও গৌরবের নয়।
শিক্ষালাভ কিংবা কর্মপ্রাপ্তির আবশ্যকতা অবশ্যই আছে। শিক্ষা ছাড়া চেতনা আসে না এবং চেতনা ব্যতিরেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাও বহুলাংশে হ্রাস পায়। যে-কোনও কল্যাণব্রতী রাষ্ট্র তাহার নাগরিকদের শিক্ষিত দেখিতে চাহিবে এবং সে জন্য প্রযত্ন করিতেও প্রস্তুত থাকিবে। কিন্তু শিক্ষা ব্যতীত প্রাণধারণ অসম্ভব নয়। কর্মসংস্থানের অধিকারের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। মনের হরিষে নিদ্রা যাইবার অধিকারও অবশ্যই সকল নাগরিকের থাকা উচিত। কিন্তু ইহা বাঁচার অধিকারের সমতুল কি না, সে বিষয়ে সংশয় থাকিবেই। রামদেব-অনুগামীদের নিদ্রিত অবস্থায় লাঠিপেটা বা টানাহ্যাঁচড়া করা অবশ্যই দিল্লি পুলিশের পক্ষে নিন্দনীয় অপকর্ম। কিন্তু সুপ্তোত্থিতের বাঁচিয়া থাকার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হইবে জানিলে কোন মা তাঁহার শিশুসন্তানকে পড়িতে বসার জন্য ডাকাডাকি করিবেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.