বিচারপর্ব চলাকালীনই জেল হাজতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ঘটল সাংসদ ওয়াংচা রাজকুমার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নাগা জঙ্গি কাপিং ইয়াংখামের। ঘটনার জেরে, অভিযোগের আঙুল উঠেছে সিবিআইয়ের দিকে।
২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর অরুণাচলপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী ও তিনবারের সাংসদ রাজকুমার তিরাপ জেলার দেওমালিতে খুন হন। সিবিআই ঘটনার তদন্ত চালাতে গিয়ে একাধিক নাগা জঙ্গিকে আটক করে। তাদের জেরা করেই জানা যায় নিছক দুষ্কৃতী বা ভাড়াটে খুনি নয়, ওয়াংচা রাজকুমারকে হত্যা করেছে খোদ এনএসসিএন (আই এম)। সিবিআই সূত্রে খবর, ধৃত আই-এম জঙ্গিরা স্বীকার করেছে, রাজকুমারকে গুলি করে হত্যার কথা। ১৭টি গুলি মেলে রাজকুমারের দেহে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য। ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
ঘটনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক সন্দেহ এনএসসিএন (আই এম)-এর উপরেই ছিল। তবে সিবিআইয়ের কাজ সহজ করে দেয় এনএসসিএন (আই এম)-এর খোনসা প্রদেশের কর্পোরাল ওয়াংনাই ওয়াংসু। রাগের মাথায় এরিয়া কম্যান্ডারকে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করেছিল সে। পুলিশ ও সিবিআইয়ের কাছে ঘটনার বিশদ বিবরণ দিয়েছে ওয়াংসু। রাজকুমার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত হিসেবে যাদের নাম উঠে আসে তারা হল-- ক্যাপ্টেন রাইজং, ল্যান্স কর্পোরাল কাপিং ইয়াংখাম তাংখুল, তাচে ওয়াংসু, সার্জেন্ট মেজর লাপজই তাংখুল, সার্জেন্ট মেজর নিংগন ও রামচাং। ওয়াংসুর বর্ণনামতো সন্দেহভাজনদের ছবিও আঁকিয়েছে সিবিআই। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরে, কাপিং মণিপুরের উখরুল জেলা থেকে, আসাম রাইফেল্সএর হাতে গ্রেফতার হয়। তাকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রথমে সিবিআইয়ের অফিসারেরা কাপিংকে কলকাতা নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে অরুণাচলের নামসাই হয়ে তাজুতে আনা হয়। তখন থেকে, তেজু জেলেই থাকছিল কাপিং। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বরের শুনানিতেও কাপিং-এর জামিনের আবেদন বাতিল হয়। কাপিং-এর আইনজীবী জাওয়াং সুম্পার দাবি, প্রায় পাঁচ মাস ধরে সিবিআইয়ের দৈহিক ও মানসিক অত্যাচারে কাপিং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসার খাতিরে তাকে জামিন দেওয়ার জন্য আবেদন ফের জানানো হলে, সিবিআইয়ের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে আরও সময় চান। আদালত, আগামী ৯ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছিল। কিন্তু তার আগেই, কাপিং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এর পরই শুরু হয় তৎপরতা। কাপিংকে তড়িঘড়ি প্রথমে তেজু হাসপাতাল ও পরে, অসম মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু কাপিংকে বাঁচানো যায়নি। ১৭ ফেব্রুয়ারি সে মারা যায়। হাজতে দিনের পর দিন অত্যাচার, মারধর চালানো ও গুরুতর অসুস্থ বিচারাধীন বন্দিকে চিকিৎসার ন্যূনতম সুবিধা না দেওয়ার অভিযোগ-সহ, কাপিং-এর মৃত্যুর জন্য সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রাজকুমার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন হিসাবে সিবিআই চার্জশিটে মোট ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১১ জন গ্রেফতার হয়। পাঁচ সন্দেহভাজনকে গৌহাটি হাইকোর্ট ইতিমধ্যে জামিন দিয়েছে। |