নামেই বসন্ত। শীতকে নির্বাসনে পাঠিয়ে থার্মোমিটারের পারা উঠছে চড়চড়িয়ে। দখিনা বাতাসে জোর না-থাকায় ইতিমধ্যেই মালুম হচ্ছে গ্রীষ্মের আঁচ।
এটা কিন্তু শুধু দক্ষিণবঙ্গ বা পূর্ব ভারতের ছবি নয়। পাঁচ-পাঁচটা ইনিংস খেলে শীত পাততাড়ি গোটানোর পরে দেশ জুড়েই তাপমাত্রা হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে। এমনকী, সম্প্রতি তুষারঝড়ে আক্রান্ত কাশ্মীর, বা হিমাচলের শৈলশহর শিমলাতেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের গণ্ডি ছাড়িয়েছে অনেকটা। পূর্ব ভারতে অবশ্য বৃদ্ধিটা নজরে পড়ার মতো। পটনা-রাঁচি-কলকাতায় তো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে আরও ঊর্ধ্বমুখী! কোথাও তা ইতিমধ্যে এ সময়ের স্বাভাবিকের পাঁচ ডিগ্রি উপরে উঠে ৩৫ ডিগ্রিও ছুঁয়ে ফেলেছে!
গত ডিসেম্বর ইস্তক পাকিস্তান দিয়ে ঘন ঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢোকায় কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল-সহ গোটা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে একটানা শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাও কয়েক দফায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে। এমনকী, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহেও গরম জামা পরতে হয়েছে কলকাতাবাসীকে। |
কিন্তু তার পরে হঠাৎ যে ভাবে গরম বাড়তে শুরু করল, তা অবাক করারই মতো। যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের বক্তব্য, “শীত ফুরিয়ে সবে বসন্ত এসেছে। এ সময়টায় বায়ুপ্রবাহ কিছুটা অস্থির থাকে। তাই তাপমাত্রায় হঠাৎ হঠাৎ বাড়া-কমার প্রবণতা দেখা যায়। বায়ুপ্রবাহ স্থিতিশীল হয়ে গেলে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা।” গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, গত ক’দিন দক্ষিণবঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। রবিবার কিছুটা কমেছে। আগামী ক’দিন এমন বাড়া-কমা চলবে।
তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কোথাও কোথাও যে অস্বাভাবিক, নয়াদিল্লির মৌসম ভবনের আবহবিদদের একাংশ তা মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, “মুম্বইয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চড়ে গিয়েছিল ৩৯ ডিগ্রিতে। মুম্বইয়ে ফেব্রুয়ারির তাপমাত্রা আগে কবে এতটা উঠেছিল, রেকর্ড ঘেঁটেও তা আমরা পাইনি। খতিয়ে দেখছি, কেন এমন হল।” কলকাতাতেও এ সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিকই মনে হয়েছে মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীদের।
জম্মু-কাশ্মীর বা হিমাচলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়লেও উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিন্তু এখনও এ সময়ের স্বাভাবিকের নীচে। পঞ্জাবের অমৃতসর, হরিয়ানার হিসার কিংবা উত্তরপ্রদেশের আগরায় রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের দু’-তিন ডিগ্রি নেমে গিয়েছে। সেখানকার মানুষ এখনও শীতে কাবু। যার ব্যাখ্যা হিসেবে আবহবিদেরা বলছেন, সারা দেশের তুলনায় ওই সব তল্লাটে আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি কিছুটা আলাদা।
তবে আবহবিদেরা জানিয়েছেন, আগামী ক’দিনে দেশের সর্বত্র তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, শেষ ফেব্রুয়ারির এ হেন পরিস্থিতি দেখে আগামী গ্রীষ্ম সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়াটা ভুল হবে। কারণ, গ্রীষ্মের তাপমাত্রা অত্যধিক বাড়তে হলে পরিমণ্ডলে যে সব লক্ষণ থাকা দরকার, সেগুলো এখনও অনুপস্থিত। তাঁদের অনুমান, মার্চের মাঝামাঝি আসল পরিস্থিতি বোঝা যাবে। |