একটি ইংরেজি শব্দ। সেটি ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক।
‘সেক্সি’ শব্দটি নাকি খারাপ নয়। কোনও মহিলাকে ‘সুন্দর’ বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা যেতেই পারে। একটি আলোচনাসভায় ঠিক এই কথাটাই বলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা। গত কাল জয়পুরে ‘গেটওয়ে টু ফিউচার’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচনার বিষয় ছিল মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা। সেখানেই মমতা শর্মা মন্তব্য করেন, “কেউ যদি তোমায় ‘সেক্সি’ বলে, তাতে বিরক্ত হয়ো না। বরং বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে দেখো। তুমি সুন্দর বোঝাতেও তো শব্দটি ব্যবহার হতে পারে। এটাকে সব সময় নেতিবাচক শব্দ হিসেবে ধরো না।”
সভায় উপস্থিত বাকিরা তখন স্তব্ধ। পরে সকলে মমতাদেবীর মন্তব্য নিয়েই আলোচনা শুরু করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আয়োজক তো বলেই ফেললেন, “উনি যে পদে রয়েছেন, সেখানে থেকে এই ধরনের মন্তব্য খুবই হতাশাজনক। উনি আমাদের গোটা অনুষ্ঠানটাই মাটি করে দিয়েছেন। কারণ এখন সবাই ওনার বক্তব্য নিয়েই আলোচনা করছে।”
 |
মমতা শর্মা |
স্বয়ং মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য শোনার পরে দেশ জুড়েও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মমতা শর্মার পদত্যাগ চেয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন। মুখ খুলেছে বিজেপিও। “মমতা শর্মা হিসেবে উনি যা খুশি বলতে পারেন। কিন্তু জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে এই ধরনের হাস্যকর মন্তব্য উনি করতে পারেন না। আমাদের দেশের আইন বলে, কোনও মহিলার প্রতি যৌনতা মাখানো মন্তব্য করাও কিন্তু তাঁকে হেনস্থা করার সমান। মমতাদেবীর কাছে হয়তো এই মন্তব্যটি কোনও বড় বিষয় নয়। আমরা কিন্তু ব্যাপারটা হিংসার প্রচার হিসেবেই দেখছি,” বলেছেন পিইউসিএল-এর সাধারণ সম্পাদক কবিতা শ্রীবাস্তব। তাঁর আরও দাবি, গোটা বিষয়টির নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে পদ থেকে সরে আসা উচিত মমতা শর্মার।
রাজস্থানের মহিলা সংগঠনগুলি একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “এক জন মহিলা ‘সেক্সি’ শব্দটি কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের মন্তব্য বিস্ময়কর।” একই সুরে বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেছেন, “এই ধরনের মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে মমতা শর্মার মতো এক জন যিনি এত বড় একটা পদ সামলাচ্ছেন।” এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাটও। তবে বৃন্দা বিষয়টি অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, “আপত্তির বিষয় কোনও নির্দিষ্ট শব্দ নয়। কোনও মহিলার প্রতি অশালীন মন্তব্যই অপরাধ। তাতে কী শব্দ ব্যবহার করা হল, সেটি বিষয় নয়।”
যাঁর মন্তব্য ঘিরে দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, সেই মমতা শর্মা কিন্তু এখনও নিজের বক্তব্যে অটল। তাঁর দাবি, তিনি ‘বৃহত্তর’ ক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখেই মন্তব্যটি করেছেন। এ নিয়ে এত হই চইয়ের কিছু নেই। “আমি বলেছি, ‘সেক্সি’ মানে সুন্দর। সবার উচিত এটা ইতিবাচক ভাবে দেখা। বর্তমান প্রজন্ম যথেষ্ট শিক্ষিত। তাদের চিন্তাধারাও আমাদের থেকে আলাদা। আমি হয়তো বৃহত্তর ক্ষেত্রে শব্দটির মানে বলেছি। কিন্তু তার মানে একেবারেই এটা নয় যে, কোনও রাস্তার ছেলে কোনও মেয়েকে বিরক্ত করতে সেই শব্দটা ব্যবহার করতে পারবে,” বলেছেন মমতা।
তবে মমতা শর্মাকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১১ সালে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পান মমতা। তখনও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতর সেই অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি করলে বিষয়টি থিতিয়ে যায়। মহিলা কমিশনের দায়িত্ব পাওয়ার আগে রাজস্থান মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রীর পদও সামলেছেন মমতা। কিন্তু দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য তাঁকে সেই পদ থেকে পরে সরিয়ে দেওয়া হয়। |