২০০৩ সালের বন্যায় ভেঙে গিয়েছিল ময়ূরাক্ষীর একটি শাখা কাঁদরের এই সেতুটি। লাভপুর থানার দাঁড়কা গ্রাম লাগোয়া এই সেতু পুনর্নির্মাণে কাউকে ‘উচ্চবাচ্চ’ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে আশপাশের প্রায় ৭-৮টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ দিকে বর্তমান এবং বিগত পঞ্চায়েত পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপাতে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষের মধ্যে। তাঁরা অবিলম্বে ওই সেতু পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা হিয়েছে, দীর্ঘ আট বছর কেটে গেলেও নতুন করে সেতুর কাজ শুরু হয়নি। তাঁদের দাবি, বার বার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। বিগত পঞ্চায়েত প্রধান মনিরুল ইসলামের দাবি, তাঁদের ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপি জোটের পঞ্চায়েত ২০০৮ সালে সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু সামনে নির্বাচন এসে পড়ায় তাঁরা কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি। নির্বাচনে পালাবদল হয়ে ওই পঞ্চায়েতে সিপিএম ক্ষমতায় আসে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিগত পঞ্চায়েতের সেতু নির্মাণের উদ্যোগের জেরে নতুন সমস্যায় পড়েন এলাকার মানুষজন। ইতিপূর্বে ভেঙে যাওয়া সেতুর স্তম্ভের উপর বাঁশের মাচা তৈরি করে কাঁদর পারাপারের সাময়িক ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেতু পুনর্নির্মাণের জন্য বিগত পঞ্চায়েত মাঝের স্তম্ভটি ভেঙে ফেলায় পারাপারের সেই সুযোগটিও হারাতে হয়েছে ওই সেতু ব্যবহারকারীদের। জামা-কাপড় কাঁদরের জলে ভিজিয়েই পারাপারে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, বর্তমান পঞ্চায়েতের তরফেও সেতু সমস্যা মেটানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। |
অথচ ওই কাঁদর পেরিয়েই স্থানীয় দাঁড়কা, মীরবাঁধ, দরবারপুর-সহ ৭-৮টি গ্রামের চাষিদের কৃষি কাজের জন্য যেতে হয় অন্য পাড়ে। এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটিও রয়েছে অন্য পাড়ে। কাঁদরের জলে নেমেই পারাপার করে চাষিরা সব্জি-ফসল নিয়ে হাটবাজারে কিংবা হিমঘরে যান। রামপুরহাট, সাঁইথিয়ায় বাস ধরার জন্যও এ ভাবেই তাঁদের কাঁদর পেরিয়ে ময়ূরাক্ষ্মীর অপর পাড়ে উলকুন্ডা বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। আবার কাঁদরে বেশি জল থাকলে এলাকার মানুষজনকে ১০-১২ কিমি ঘুরপথে যেতে হয়।
স্থানীয় দাঁড়কা গ্রামের কাজল রায়, সুপ্রভাত চক্রবর্তীদের অভিযোগ, “কাঁদরে জল বাড়লেই পারাপার করতে আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। চাষের সময় সাঁতার কেটে মাঠে যেতে হয়।” খেলার মাঠে পৌঁছতে এলাকার ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরাও বিস্তর সমস্যায় পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে পঞ্চায়েতের তরফে কোনও হেলদোল নেই। ওই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা লাভপুরের বর্তমান বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাবি, “ওই সেতুটি পুননির্মাণের জন্য আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনী বিধি নিষেধের কারণে সেতুটির পুনর্নির্মাণ করা যায়নি।” অবশ্য ওই পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান, সিপিএমের সেরি বিবি-র দাবি, “আগের বোর্ড ওই সেতু নির্মাণের জন্য কোনও অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা তো দূরের কথা, সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাই গ্রহণ করেনি। তবে আমরা ‘অ্যাকশন প্ল্যানে’ ওই সেতুটি পুননির্মাণের প্রস্তাব নিয়েছি। অর্থ সংস্থান হলেই সেতুর কাজ শুরু করব।” এ দিকে সংশ্লিষ্ট লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের নদেরচাঁদ বাগদির আশ্বাস, “পঞ্চায়েত থেকে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠালে, গুরুত্ব অনুযায়ী আমরা তা খতিয়ে দেখব।” |