মহড়ায় না থাকলে বসন্ত উৎসবের শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া যাবে না। অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে যাঁরা থাকবেন, এ বার তাঁরাও শোভাযাত্রায় পা মেলাতে পারবেন না। বসন্ত উৎসব নিয়ে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বসন্ত উৎসব সুশৃঙ্খল করতে একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মগুলির নিরাপওা নিয়েও কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের উপস্থিতিতে এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলি নেয়। বিশ্বভারতীর কর্মসচিব, সমস্ত ভবনের অধ্যক্ষ, আধিকারিকরা ও কর্মী পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে ওই বৈঠক হয়। বিশ্বভারতীর কর্মী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক কানাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শোভাযাত্রার মহড়ায় নিয়মিত যোগ না দিলে এ বার আর বসন্ত উৎসবের দিন শোভাযাত্রায় থাকা যাবে না। আগের মতো শোভাযাত্রা থেকে এসে মূলমঞ্চেও ওঠা যাবে না। আগের থেকে আরও সুশৃঙ্খল ভাবে বসন্ত উৎসব করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” প্রসঙ্গত ২০১০ সালে বসন্ত উৎসবের আগের রাতে বিশ্বভারতীতে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সংঘর্ষের জেরে বসন্ত উৎসবের রাতের অনুষ্ঠান বাতিল করেন বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য রজতকান্ত রায়। |
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌর প্রাঙ্গন লাগোয়া আশ্রম মাঠের মূল মঞ্চে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান হয়। তার আগে বিরাট শোভাযাত্রা বের হয়। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ওই শোভাযাত্রায় বহিরাগতদের ভিড় বেড়ে গিয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে শোভাযাত্রায় মহড়ায় না থাকা ছাত্রছাত্রী, কর্মী ও শিক্ষকরাও জোর করে ঢুকে পড়তেন। এর ফলে শোভাযাত্রায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হত। নির্ধারিত আধ ঘণ্টার শোভাযাত্রা অনেক সময় মূল মঞ্চে পৌঁছতে তার থেকে বেশি সময় লেগে যেত। ফলে মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু করতেও দেরি হয়ে যেত। এ বার ঠিক হয়েছে, মহড়ায় না থাকলে, তাঁদের শোভাযাত্রায় যোগ দিতে দেওয়া হবে না। শোভাযাত্রায় যোগদানকারীদের পোশাক বিধিও মানতে হবে। জন সমাগমের কথা মাথায় রেখে কলা ভবন ও সঙ্গীত ভবন চত্বরে থাকা বিভিন্ন শিল্পকর্ম রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ব্ল্যাক হাউস বা কালোবাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়া লাগানো হচ্ছে। অতীতে ছাত্র সংঘর্ষের সময় ব্ল্যাক হাউস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়েছিল। কলাভবনের অধ্যক্ষ অশোক ভৌমিক এ ব্যাপারে সতর্কতা নেওয়ার জন্য বৈঠকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধিরূপা সিংহ এবং বিশ্বভারতীর কর্মসচিব মনিমুকুট মিত্র জোরাল আবেদন জানান, নিয়মিত মহড়ায় না আসাদের শোভাযাত্রায় ঢুকতে দেওয়া যাবে না। জানা গিয়েছে, উৎসব পরিচালনার জন্য সাতটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বার শান্তিনিকেতনের কর্মী মণ্ডলীর পাশাপাশি শ্রীনিকেতনের কর্মী সঙ্ঘকেও সক্রিয় ভাবে উৎসব পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তাই সামগ্রিক ভাবে বিশ্বভারতীর কর্মীপরিষদকেই উৎসব পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পোস্ট অফিস মোড় থেকে সঙ্গীত ভবনের চেকপোস্ট পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আগামী কাল মঙ্গলবার, বসন্ত উৎসব নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বৈঠকে বসার কথা। |