‘মাকে একা পেয়ে ওরা মেরে ফেলবে না তো’
মার মাথার একদম কাছে বন্দুক ধরেছিল লোকটা। আর গলায় ভোজালি। দাঁত চেপে চেপে বলছিল, ‘চিৎকার করলে তোর মাকে মেরে ফেলব।’ কী করব আমি? ভয়ে চুপ করে যাই।
আর একটা লোক তখন মাকে টেনে-হিঁচড়ে ট্রেন থেকে নামাচ্ছে। মা কত করে ওই লোকটার হাতে-পায়ে ধরল। কত কান্নাকাটি করল! কিন্তু মাকে ওরা ছাড়ল না!
এক জনের বাড়ি গিয়েছিলাম আমরা। কীর্ণাহারের কাছে রামকৃষ্ণপুরে। মা তো কাপড়ে নকশা তোলে। সেই কাপড়ই বিক্রি করতে গিয়েছিল। তার পরে বিকেলে ছোট রেলে চেপে গ্রামে ফিরছিলাম।
তখন সবে সন্ধে নেমেছে। আমাদের স্টেশন প্রায় চলেই এসেছিল। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেনটা। সবাই গলা বাড়িয়ে দেখছে, কেন ট্রেন থামল। মা-ও দেখছিল। এমন সময় দু’টো ‘বড় লোক’ কামরায় উঠে এল। ওদের হাতে বন্দুক আর ছুরি। আমাদের কামরার দু’টো লোকও ওদের সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। ওরা সবাইকে খুব মারছিল। যার কাছে যা ছিল, সব কেড়ে নিচ্ছিল।
অভিযোগকারিণীকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়ের সামনে দু’জন এসে দাঁড়ায়। মা’র গলায় একটা ইমিটেশনের হার ছিল। ওটা টান মেরে খুলে নিল। তার পরেই মাকে বলল, ‘তোর কানে সোনার দুল ছিল না, কোথায় গেল?’ মা বলল, ‘আমার কাছে আর কিছুই নেই। যা ছিল, দিয়ে দিয়েছি।’ ওই লোকগুলো তখন বলে, ‘সেই কীর্ণাহার থেকে দেখছি, তোর কানে দুল। তুই মিছে কথা বলছিস।’ ওরা তখন মায়ের গালে ভোজালি দিয়ে মারে। মা’র গাল কেটে গিয়েছিল। এর পরেই ওরা বন্দুক বের করে। মায়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। যে লোকটা মাকে ট্রেন থেকে নামাচ্ছিল, মা কান্নাকাটি করতে লোকটা জোরে জোরে বলতে লাগল, ‘আর যদি কান্নাকাটি করিস, তা হলে তোর মেয়েকে মেরে ফেলব।’ মাকে ওরা টানতে টানতে নামিয়ে নিল।
মা তো ফিরছে না। আমি ভয়ে আরও জোরে কাঁদতে শুরু করে দিই। একটু পরেই অবশ্য মা ট্রেনে ফিরে এল। গোটা গায়ে রক্ত। শাড়ি ছেঁড়া। ওরা আবার ট্রেনে উঠে আসে। মাকে বলে, ‘এর পরে যদি কোনও দিন এ লাইনে দেখি, একেবারে প্রাণে মেরে দেব।’ ওই কামরাতেই ঠাকুমার বয়সী তিন-চার জন মহিলা ছিলেন। আরও অনেক লোক ছিল। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। বন্দুক দেখিয়ে ওরা সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছিল। শুধু এক জন মহিলা মাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়েছিল। ওরা তাকেও অনেক অনেক মেরেছে।
ওরা চলে গেল। ট্রেনও ছাড়ল।
স্টেশনে নেমে কোনও রকমে মাকে ধরে ধরে বাড়ি নিয়ে আসি। তখন হয়তো সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা হবে। বাড়ি এসে সোজা দোতলায় উঠে যাই। কারও সঙ্গে কোনও কথা বলিনি। মা খুব কাঁদছিল। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমিও কাঁদছিলাম। মায়ের গোটা গায়ে কাঁটা বিঁধেছিল। কাঁটাগুলো আস্তে আস্তে বের করে দিই। একটু পরেই বাড়িতে পুলিশ এসে মাকে নিয়ে যায়। জেঠু-জেঠিমা-ও মায়ের সঙ্গে গেল।
সারা রাত খাইনি, ঘুমোইনি। অনেক রাতে মা বাড়ি ফিরল। ভোরে আবার পুলিশ এসে মাকে নিয়ে গেল। আমার খুব ভয় লাগছে। বাবাকে আমি দেখিনি (জন্মের তেইশ দিনের মাথায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবার মৃত্যু হয়)। মাকে তো কাজের জন্য ওই ট্রেনেই যেতে হয়। কখনও একা পেয়ে মাকে ওরা মেরে ফেলবে না তো?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.