বাড়িতেই খুন ওসি-র বাবা
সজাগ হোক পুলিশ, দাবি আতঙ্কিত বাসিন্দাদের
খুন হয়ে গিয়েছেন খোদ ওসি-র বাবা। ভর সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের মতো জমজমাট এলাকায়। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরেও এই ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের অবশ্য আশ্বাস, “তদন্ত শুরু হয়েছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।
নিজের বাড়িতে নিহত ওই বৃদ্ধের মেয়ে আসানসোলে মহিলা থানার ওসি।
তদন্তে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারের উদয়শঙ্কর বীথি বেশ জনবহুল এলাকা। সেখানেই ৪১ নম্বর বাড়িতে থাকতেন দিলীপকুমার বসু (৮০)। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অ্যাকাউন্টস বিভাগের প্রাক্তন কর্মী তিনি। সঙ্গে থাকতেন তাঁর ছোট মেয়ে সোনালিদেবী। একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি কর্মরত। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, বাইরের ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে তাঁর বাবা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাশের বাড়ির লোকজনদের ডাকেন। তাঁর দিদি শম্পা বসু আসানসোলের মহিলা থানার ওসি। দিদিকে খবর দেন সোনালিদেবী। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ চলে আসে। জখম দিলীপবাবুকে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পথেই মারা যান তিনি। খবর পেয়ে আসেন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ।
দিলীপবাবুর বাড়ি একেবারে বড় রাস্তার ধারে। সামনেই মাঠ। সেখানে রাত পর্যন্ত খেলাধুলো করে পাড়ার ছেলেরা। রাস্তায় সান্ধ্যভ্রমণে বেরোন অনেকেই। অথচ সেখানেই এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আতঙ্কের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তার উপরে নিহত ব্যক্তি পুলিশ আধিকারিকের বাবা হওয়ায় সেই আতঙ্কে অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে। বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ আধিকারিকের বাবার যদি এমন পরিণতি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দার সরাসরি প্রশ্ন, “কমিশনারেট হয়ে তা হলে কী লাভ হল?” প্রসঙ্গত, গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
রবিবার সকাল থেকে বাড়িটি তালাবন্ধ ছিল। দুপুরে শম্পাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীরা আসেন তদন্তে। নেতৃত্বে ছিলেন এসিপি (ডিডি) চন্দ্রশেখর বর্ধন। গোয়েন্দাবিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলের ছবি তোলেন। বিভিন্ন মাপজোক করেন। তবে কী কারণে দিলীপবাবু খুন হলেন তা নিয়ে পুলিশ এখনও ধন্দে। দিলীপবাবুর ঘর থেকে কোনও জিনিস খোওয়া গিয়েছে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত নন পরিবারের সদস্যেরা। এমনিতে দিলীপবাবু নির্বিরোধী মানুষ ছিলেন। কাজেই পুরনো কোনও শত্রুতার জেরে এমন ঘটেছে বলেও প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে না। শম্পাদেবী বলেন, “কেন এমন হল, কিছুই বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দাদের মুখ থমথমে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন পথচলতি মানুষজন। একতলা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখছেন তাঁরা।
এই বাড়িতেই খুন হন দিলীপবাবু
পাশের বাড়িতেই থাকেন মিঠু চৌধুরী। তিনি জানালেন, শনিবার সন্ধ্যায় সোনালিদেবী তাঁকে ডেকে জানান, তাঁর বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। মিঠুদেবীর কথায়, “ওদের বাড়িতে গিয়ে ওই দৃশ্য দেখে আমি শিউরে উঠি। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। সিটি সেন্টারেই বড় হয়েছি। কিন্তু কোনও দিন এমনটা হতে পারে, স্বপ্নেও ভাবিনি।” আর এক প্রতিবেশী দুর্গাপুর ইস্পাতের প্রাক্তন কর্মী বিমলেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, দিলীপবাবু তেমন বাইরে বেরোতেন না। তাঁর হাঁপানির সমস্যা ছিল। মাঝে মাঝে বাইরের বারান্দায় এসে বসতেন। এমনিতে মানুষের সঙ্গে কমই মিশতেন। তাঁর বড় ছেলে দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। ছোট মেয়ে সঙ্গে থাকেন। মাঝে মাঝে আসেন শম্পাদেবীও। পাশের বাড়িতে এমন ঘটে যাওয়ায় কার্যত বিহ্বল হয়ে পড়েছেন বিমলেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “দুর্গাপুর রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে এমন ঘটনা ঘটছে। খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। পুলিশের উচিত আরও সজাগ হওয়া।”
কাছেই থাকেন সন্ধ্যা বসু। তিনি বলেন, “খবরটা পাওয়ার পর থেকেই ভয়ে ভয়ে আছি। এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।” সরাসরি না হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। কিছু পরেই তিনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন। কথা বলেন পাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গেও। পরে তিনি বলেছেন, “বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। পুলিশের এক অংশ তেমন তৎপর নয়। তাই অপরাধীরা এমন কাজ করার সাহস পাচ্ছে।”

রবিবার ছবি দু’টি তুলেছেন বিকাশ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.