বাজারে দাম কম থাকায় গত মরসুমে হিমঘরে মজুত আলু তোলেননি কৃষকরা। নির্ধারিত সময়সীমা পেরোনোর পরে বারবার তাগাদা দিয়েছেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। তাতে সাড়া মেলেনি। প্রায় ১ বছর হিমঘরে পড়ে থাকার জন্য আলুতে পচনও ধরেছে। শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কুইন্টাল আলু শনিবার মাটির তলায় পুঁতে দিলেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। কোচবিহারের বাণেশ্বর লাগোয়া গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনারিতে ওই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই কোচবিহারের বিভিন্ন মহলে কৃষকদের উৎপাদিত ফলনের নায্য দাম না মেলার ওই ঘটনা ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। অস্বস্তিতে পড়েছেন কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারাও। কৃষি বিপণণ দফতরের কোচবিহারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খোঁজ না নিয়ে ওই ব্যাপারে কিছু বলব না।” কোচবিহার কৃষি দফতর ও ওই হিমঘর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার আলু চাষ অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে কোচবিহার-২ ব্লক অন্যতম। ওই ব্লকের বাণেশ্বর, খোলটা-মরিচবাড়ি,থানেশ্বর, ঢাংঢাংগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার কৃষকরা সোনারি এলাকার ওই হিমঘরে আলু মজুত রাখেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে তারা ওই হিমঘরে উপাদিত আলু মজুত করেন। কিন্তু বাজারে দাম না পাওয়ায় গত বছরের ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের অনেকেই মজুত আলু তোলেননি। পরে প্রশাসন আলু মজুত রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর করে। তবুও প্রায় ২০ হাজার কুইন্টাল আলু হিমঘরে মজুত হয়ে থাকে। শনিবার ৪০ হাজার বস্তায় সাজানো ওই বিপুল পরিমাণ আলু মাটির নিচে পুঁতে দেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। |
সোনারির ওই হিমঘরের ম্যানেজার নাজির হোসেন বলেন, “সময়সীমা পার হওয়ার পরেও আমরা অপেক্ষা করেছি। গ্রামে প্রচারও করা হয়। কিন্তু কৃষকেরা কেউই ওই আলু হিমঘর থেকে বের করে নেওয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করেননি। পচন ধরে যাওয়ায় দূষণ ছড়ানোয় এদিন ওই ২০ হাজার কুইন্টাল আলু মাটিতে পুঁতে দিতে বাধ্য হই। সেই সঙ্গে ওই হিমঘর কর্তৃপক্ষের দাবি, মাটিতে পুঁতে দেওয়া আলু মজুত করেছিলেন প্রায় ২০০ জন কৃষক।” চাষিরা কী বলছেন দেখা যাক। বাণেশ্বরের ইছামারী গ্রামের আলু চাষি গোবিন্দ সেন বলেন, “৫০ কেজির আলুর একেকটি বস্তার জন্য হিমঘরে ভাড়া দিতে হত সাড়ে ৬২ টাকা। নভেম্বর মাসে বাজার দর যা ছিল তাতে বস্তা পিছু বড়জোর ৫০ টাকা পাওয়া যেত। সে সময়ই হিমঘরের ম্যানেজারকে আমার পক্ষে মজুত আলু বার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিই। অন্যবার একই সময়ে ৫০ কেজি আলু ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হত। এদিন সেই সব আলু মটিতে পুঁতে দেওয়া হয় বলে শুনেছি।” তাঁর দাবি, অসমে চাহিদা কমে যাওয়ায় সমস্যা হয়। তবে গোবিন্দবাবু জানান, সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তিনি। ৫০ কেজি বস্তার মোট ২১৫ বস্তা আলু উপাদন হয়। তার মধ্যে স্থানীয় ভাবে প্রথম দিকে পাইকারকে কিছুটা বিক্রি করেন। কয়েক বস্তা খাওয়ার জন্য রেখেছিলেন।২০০ বস্তা হিমঘরে লাভের আশায় মজুত করেন। নিয়ম অনুযায়ী, হিমঘরে রাখা আলু তোলার সময় কৃষক পণ্য মজুত রাখার ভাড়া মেটান। এবার বাজারে দাম না পাওয়ায় তারা ওই বিপুল পরিমাণ আলু না তোলায় হিমঘর কর্তৃপক্ষের আর্থিক লোকসান হয়েছে। আলুচাষিদের অভিযোগ, বাজারে দাম না মেলায় হিমঘরে আলু ফেলে রাখতে হয়। তার মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসায় সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ায় তারা নিরুপায় হয়ে পড়েন। ওই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার কোচবিহারের জেলা সহকারী সম্পাদক তথা প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায়। তাঁর কটাক্ষ, “রাজ্য সরকার হিমঘরে মজুত আলু মিড ডে মিলে ব্যবহার, বিদেশে রফতানির নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তাবায়িত হয়নি।” কোচবিহারের নাটাবাড়ি তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য আগের বাম সরকারকেই দূষেছেন। তিনি বলেন, “আগের বাম সরকার আলুচাষিদের পাশে দাঁড়ায়নি। সে জন্য দাম পাননি তাঁরা। সে জন্য এমন হয়েছে। আমরা চাষিদের পাশে আছি।” |