বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল শহর জলপাইগুড়ি। শনিবার দুপুরে শহরের ডিবিসি রোড এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের ভিতরে একটি ট্যাঙ্কারের ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ইঞ্জিনটি। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ট্যাঙ্কারের ইঞ্জিনের ব্যাটারি থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ট্যাঙ্কার থেকে মাটির নীচে থাকা পাম্পের ড্রামে তেল ভরার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আগুন লেগে যায়। পাম্পের ভিতরে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনায় ডিবিসি রোড চত্বর থেকে দিনবাজার, কদমতলা সহ শহর জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আতঙ্কিত মানুষ পালাতে শুরু করেন। ছড়িয়ে পড়তে থাকে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিবিসি রোডের যে এলাকায় পাম্পটি রয়েছে সেটি ঘিঞ্জি এলাকা। পাম্পের দু’পাশে সারি দিয়ে দোকান, ব্যাঙ্ক, অফিস রয়েছে. রয়েছে। আছে বহুতল। পাম্প থেকে কয়েক মিটার দূরে থানা মোড় এলাকায় রয়েছে আরও একটি পেট্রোল পাম্প। ট্যাঙ্কারের ইঞ্জিন থেকে আগুন ছড়িয়ে ট্যাঙ্কারের ভিতরে পেট্রোলে পৌছে গেলে সেই আগুন পাম্পে মাটির তলায় থাকা পেট্রোলের ড্রামেও পৌছে যেত বলে দমকল কর্মীদের আশঙ্কা। সেটা হলে শহরের ডিবিসি রোড, থানামোড় লাগোয়া অন্যতম ব্যস্ত এলাকা দিনবাজারে আগুন ছড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির কী আকার নিত তা ভেবেই শিউড়ে উঠেছেন খোদ দমকল ও পুলিশের আধিকারিকরা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “দমকলের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” |
এ দিনের ঘটনার পরে শহরের ভেতরে ঘিঞ্জি এলাকায় পেট্রোল পাম্প থাকা যুক্তিসঙ্গত কিনা তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। আগুন প্রতিরোধ বিধি অনুযায়ী পেট্রোল পাম্পে মাটির তলায় জলাধারের ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পাম্পটিতে সেই ব্যবস্থা নেই বলে দমকল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। দমকলের জলপাইগুড়ি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শান্তিরঞ্জন গুহ বলেন, “বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে। ট্র্যাঙ্কারের ইঞ্জিনের ক্রুটিতে আগুন লেগে যায় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তবে পাম্পে যে ধরনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার কথা তা ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, “দমকলের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পেট্রোল ভর্তি ট্যাঙ্কারটি পাম্পে পৌছোয়। যে ট্যাঙ্কারে তেল আনা হয়েছিল সেটি বহু পুরোনো বলে দমকল কর্তারা জানান। আগুন লাগার পরে ট্যাঙ্কারের চালক পালিয়ে যান। পাম্পের মালিক বাবুয়া সরকার বলেন, “ট্যাঙ্কার থেকে আগুন লাগে। পাম্পের কর্মীরা এবং আশেপাশের লোকজন আগুন লাগার পরে যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।” দমকল কর্তারা পাম্পে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার যে অভিযোগ তুলেছেন তা পাম্প মালিক অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “সব রকম ব্যবস্থা পাম্পে রয়েছে। উল্টে খবর দেওয়ার পরে দমকল দেরি করে এসেছে।” এ দিন অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশের ডিএসপি পদমর্যাদার একাধিক অফিসার, পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত সহ একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান কাউন্সিলার। গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের জেলা নেতা দীপশুভ্র সান্যাল বলেন, “শহরের ভিতরে পাম্প রাখা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে এবার চিন্তাভাবনা শুরু হোক।” যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ দিন জলপাইগুড়ি শহরে আমরিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা ছিল। শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় পাম্প থাকা মোটেই নিরাপদ নয়।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রবাল রাহা বলেন, “শহরবাসীর নিরাপত্তার জন্য যত কঠোর সিদ্ধান্ত হোক নিতে হবে।” এ দিনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগে পুরসভাও। চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “প্রতিটি পাম্পে যথাযথ আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরসভার তরফে দ্রুত বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।” |