কাশ্মীরে তুষারধস
দিদির বিয়ে দেওয়া হল না সেনা-ইঞ্জিনিয়ার প্রবীরের
বুধবার সন্ধে থেকে মোবাইল ফোনে আর ভাইয়ের ‘মিস্ড কল’ পাচ্ছেন না সুচিত্রা সরকার।
শত ব্যস্ততাতেও যে ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিদিন রাতে কথা বলতেন সুচিত্রাদেবী, হঠাৎ করে তা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরে প্রবল তুষারধস কেড়ে নিয়েছে সুচিত্রাদেবীর একমাত্র ভাই, সেনাবাহিনীর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর সরকারকে (২৪)।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়া ব্লক অফিসের কাছেই টালির ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর প্রবীরদের। বৃদ্ধ বাবা অনিলবাবু এবং মা শিবানীদেবী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর এক মেজরের ফোনে আসা প্রবীরের মৃত্যুসংবাদটা খান খান করে দিয়েছে ওই পরিবারের যাবতীয় স্বপ্ন, আশা-ভরসা। প্রবীর আর নেই!
কখন প্রবীরের দেহ আসবে, এই ভাবনাতেই দিন কাটছে অনিলবাবুদের। আর তার সঙ্গে দুশ্চিন্তা, এ বার কী হবে? কেননা, প্রবীরের আয়েই যে সংসার চলছিল!
প্রবীরের তিন দিদির মধ্যে বড় দু’জন বিবাহিত। সুচিত্রাদেবীর বিয়ের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন প্রবীর। ভাইফোঁটায় শেষ বার বাড়ি এসেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন আগামী ১ এপ্রিল দু’মাসের ছুটিতে ফিরবেন। এবং তখনই সুচিত্রাদেবীর বিয়ে দিয়ে যাবেন। কিন্তু প্রবীরের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
শনিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল প্রতিবেশীরা ঘন ঘন যাতায়াত করছেন। বাড়ির দাওয়ায় বসে অনিলবাবু এবং শিবানীদেবী কেঁদে চলেছেন। শিবানীদেবী তাঁর মধ্যেই আপন মনে বলে চলেছিলেন ছেলের কথা, “আমি রং-মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতাম। বছর দুয়েক আগে প্রবীর সেনাবাহিনীতে চাকরি পায়।
তখনই বলেছিল, মা জীবনে তোমাকে আর এ কাজ করতে হবে না। তখন কী আর জানতাম, দু’বছর পরে আর ও থাকবে না!” সুচিত্রাদেবী বলেন, “ভাইফোঁটার সময়ে এসে পাড়া-পড়শিদের বলেছিল আমার জন্য পাত্র দেখতে। খুব উৎসাহ ছিল ওর। প্রতিদিন রাতে মিস্ড কল করলে আমি ফোন করতাম। প্রতিদিন এক বার করে আমার পাত্র দেখা কতদূর এগোল জানতে চাইত। আর সব শেষ হয়ে গেল!” একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরব হয়ে গেলেন সুচিত্রাদেবী।
প্রবীররের মেজদি সুমিত্রাদেবী কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর ছেলে প্রতাপকে নিজেদের বাড়িতে এনে রেখেছিলেন প্রবীর। বছর দশেকের ছেলেটি মামা-অন্ত প্রাণ। এ দিন তারও চোখ ছলছল করছিল।
সন্ধ্যায় গাইঘাটা থানায় আসেন সেনাকর্তারা। আজ, রবিবার প্রতাপের মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে আনা হবে বলে তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। বসিরহাটের হরিশপুর গ্রামের গোলদার পাড়ার বাসিন্দা, সেনাবাহিনীর সুবেদার মহাদেব গায়েনও ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। শনিবার তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে আনা হয়। বসিরহাট শ্মশানে শেষকৃত্যের আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.