শুক্রবারের আগে লক্ষ্মীরতন শুক্লের আইপিএল ভবিষ্যৎ যদি লিখতে হত তা হলে এটাই লেখা হত যে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্সের জার্সি গায়ে তাঁকে খেলতে দেখার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ইডেনে দুর্ধর্ষ ১৫১-উত্তর কিন্তু লিখতে হচ্ছে যে, কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তারা নিশ্চিত নন লক্ষ্মীকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না।
অথচ সব কিছু ঠিকঠাক চললে রবিবারের মধ্যে লক্ষ্মীর সই করে ফেলার কথা ছিল পুণে ওয়ারিয়র্সে। সেখানে শনিবার রাত পর্যন্ত দু’তরফে কেউ পাকাপাকি বলতে পারছে না আইপিএল ফাইভ-এ কাদের হয়ে মাঠে নামবেন লক্ষ্মী। না পুণে ওয়ারিয়র্স বলতে পারছে তারা বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ককে পাবে কি না। না নাইট রাইডার্স বলতে পারছে তারা ছাড়বে কি না।
লক্ষ্মীরতন শুক্ল? ইডেনে যাঁর শুক্রবারের ইনিংসকে অনেকে স্মরণকালের মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনও বাংলা ক্রিকেটারের খেলা সেরা ওয়ান ডে ইনিংস আখ্যা দিচ্ছেন তিনি কী চাইছেন? নাইট রাইডার্সে থাকতে চান না কি ‘দাদা’-র সঙ্গে ক্রিকেট কিট্স নিয়ে পাড়ি দিতে চান পুণে? ভীষণ অর্থপূর্ণ শোনাল শনিবার রাতে লক্ষ্মীর বক্তব্য “আমি প্লেয়ার। আমি খেলতে চাই। পারফর্ম করতে চাই। বাইরে বসে থাকতে কারও ভাল লাগে না।” গত বার আইপিএলে কেকেআর তাঁকে মাত্র একটা ম্যাচ খেলিয়েছিল এটা মনে রাখলে কারও বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় তাঁর কী ইচ্ছা। |
লক্ষ্মী যখন দর্শক: ২৪ ঘণ্টা আগে ইডেন মাতিয়েছিলেন তিনি।
আর শনিবার লক্ষ্মীরতন শুক্ল
নিজেই মশগুল
ছেলে অগস্ত্যের ব্যাটিংয়ে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শনিবার রাতে আনন্দবাজারকে বললেন, “লক্ষ্মীকে আমরা চেয়েছি। কিন্তু এখনও আমাদের পাকাপাকি কিছু বলা হয়নি। মনে হয় দু’তিন দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।” প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শুক্রবার লক্ষ্মী-ঝড়ে যখন উড়ে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড, যখন একটার পর একটা ছয় উড়ে যাচ্ছে গ্যালারিতে, বাংলার অধিনায়ক এক দিকে খুব খুশি। অন্য দিকে পুণে ওয়ারিয়র্স অধিনায়ক খুব উদ্বিগ্ন। এই ইনিংসের পর লক্ষ্মীর পুণে ওয়ারিয়র্সে যাওয়া না আবার আটকে যায়। শোনা যাচ্ছে, শনিবার রাত থেকে আরও মরিয়া হয়ে ফোন ঘোরাতে থাকেন পুণে অধিনায়ক। লক্ষ্মীকে নিশ্চিত করার জন্য।
কেকেআর-এর পক্ষ থেকে এ নিয়ে কেউ এ দিন সরকারি ভাবে মুখ খোলেনি। যতটুকু জানা গেল, লক্ষ্মীর ভাগ্য এখন কোচ ট্রেভর বেলিস-সহ টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাধীন। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেবেন লক্ষ্মীকে রাখা হবে, না ছেড়ে দেওয়া হবে।
জানা গেল, টিম মালিক শাহরুখ খান এখন বিদেশে শুটিংয়ে ব্যস্ত। তিনি পর্যন্ত লক্ষ্মী-মামলা পৌঁছয়নি। কিন্তু আইপিএলে পুণে যাতে খেলতে পারে তার জন্য কেকেআর মালিক যে রকম সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহারা-প্রধান সুব্রত রায়ের দিকে, তাতে পুণে তাঁর টিম থেকে প্লেয়ার চাইছে আর তাঁরা দিচ্ছেন না এই দৃশ্যও আবার অনেকে কল্পনা করতে পারছেন না।
নিয়ম হচ্ছে, প্লেয়ার ট্রান্সফারে যে টিম থেকে তুমি প্লেয়ার নিচ্ছ তাদের টাকা দিতে হবে। বাংলার আর এক ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামীকে যেমন নাইট রাইডার্স ছেড়ে দিল। আসন্ন আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসে খেলবেন শ্রীবৎস। দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি খুব শান্তিপূর্ণ ভাবেই সেই দলবদল করে ফেলল। কিন্তু লক্ষ্মীর ক্ষেত্রে অঙ্ক অত সহজ দেখাচ্ছে না।
কেকেআর কর্তারা কি তা হলে লক্ষ্মীর জন্য বেশি টাকা দাবি করবেন? কেকেআর-এর পক্ষ থেকে অবশ্য সে রকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, টাকা কোনও ব্যাপার নয়। ক্রিকেটীয় লাভ-ক্ষতির দিকটা ভেবেই তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। |
আমি প্লেয়ার। আমি খেলতে চাই। পারফর্ম করতে চাই। বাইরে বসে থাকতে কারও ভাল লাগে না।
লক্ষ্মীরতন শুক্ল |
এখনও আমাদের পাকাপাকি কিছু বলা হয়নি। মনে হয় দু’তিন দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
|