আর তিন দিন বাদে শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘট। এ বার সেই ধর্মঘট থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার জন্য আইএনটিইউসি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
শুধু মনমোহনই নন, তাঁর সরকারের শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়গে শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আবেদন জানিয়েছেন। অর্থাৎ, ধর্মঘট প্রত্যাহার করাতে শেষ মুহূর্তে দৌত্য শুরু করেছে মনমোহন সরকার। সরকারের যুক্তি, মন্দার কবল থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে নিয়ে এসে আর্থিক বৃদ্ধির পথে ফেরানোর যে চেষ্টা চলছে, শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দেশ জোড়া ‘সাধারণ ধর্মঘট’-এর ফলে তা হোঁচট খাবে। ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। আজ প্রধানমন্ত্রী নিজে ধর্মঘট প্রত্যাহারে সক্রিয় হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই অবস্থান জোর পেল।
খোদ প্রধানমন্ত্রীর স্তর থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ‘অনুরোধ’ এলেও কংগ্রেসি ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা কিন্তু এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড়। বাম, বিজেপি-সহ ১১টি ট্রেড ইউনিয়নের যে জোট তৈরি হয়েছে, সেই জোট তাঁরা ভাঙতে নারাজ। আইএনটিইউসি-সভাপতি জি সঞ্জীব রেড্ডি-র দাবি, এ বিষয়ে কংগ্রেস দলও তাঁর সঙ্গে রয়েছে। রেড্ডি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। কিন্তু ধর্মঘট থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্ন নেই।” তবে পশ্চিমবঙ্গে আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য আবার ‘সাধারণ ধর্মঘট’-এর বিরোধিতা করছেন। তবে সঞ্জীব রেড্ডির দাবি, “পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হবে না, কিন্তু ওরা শিল্প ধর্মঘটে অংশ নেবেন।”
ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে এ দিন শ্রমমন্ত্রী মল্লিকার্জুন বলেছেন, “যে সব সমস্যা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, তার অনেকগুলি ক্ষেত্রেই সরকার পদক্ষেপ করেছে। তার পরেও আশ্বাস দিচ্ছি, যে কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত।” বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্তর পাল্টা জবাব, “১৫ ফেব্রুয়ারির লেবার কনফারেন্সেই শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করতে পারত সরকার। প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী সেখানে ছিলেন।” আলোচনার প্রস্তাব উড়িয়ে তাঁর ঘোষণা, “আমাদের ধর্মঘট হচ্ছেই। প্রয়োজনে পরে আলোচনা হবে।” মমতার সরকারের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, “ভয় দেখিয়ে তাৎক্ষণিক লাভ হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে।” সঞ্জীব রেড্ডি বলেছেন, “গত দু’বছর ধরে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি।” |