সড়ক পথে নয়। মঙ্গলবারের ধর্মঘটে অবরোধকারীদের হটাতে রেল লাইন দিয়েই পুলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ধর্মঘটে কোথাও রেল লাইন আটকানোর খবর এলে ‘লাইট ইঞ্জিন’ পাঠিয়ে অবরোধ তোলার নির্দেশ দিয়েছেন রেল কর্তারা।
কী ভাবে কাজ করবে ওই ইঞ্জিন? পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, ‘লাইট ইঞ্জিন’ আদতে একটি ছোট ইঞ্জিন। ওই ইঞ্জিনের সঙ্গে তিনটি কামরা জোড়া থাকে। ওই কামরাগুলিতে থাকবে রেল পুলিশ (জিআরপি) এবং রেল সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) জওয়ানেরা। রেল লাইন রক্ষার দায়িত্ব আরপিএফের। অবরোধ তোলার জন্য রাখা হবে জিআরপি-কে।
রেলের এক আধিকারিক জানান, রেল অবরোধ সরাতে সড়ক পথে না গিয়ে দ্রুত রেলপথে যাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে রেল লাইন বা রেল স্টেশনে পৌঁছনোর রাস্তাও অবরোধ করা হয়। সে ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রেল লাইন ধরে লাইট ইঞ্জিন এগোলে, ঘটনাস্থলে পৌঁছনো সহজ হবে।
ওই আধিকারিক আরও জানান, এর পাশাপাশি মঙ্গলবারের ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ‘টাওয়ার ভ্যান’ রাখা হবে। ধর্মঘটের দিন রেল চলাচল ব্যাহত করতে অনেক সময় ওভারহেড তারে গাছের ডালপালা ফেলে দেওয়া হয়। ডালপালা সরিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতেই ওই ভ্যান রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। ওই টাওয়ার ভ্যানেও থাকবে আরপিএফ। যাতে অবরোধকারীরা রেলের কর্মীদের বাধা দিতে না পারে।
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিং অবরোধকারীদের নিশানা হতে পারে বলে রেল পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। লেভেল ক্রসিংয়ের কর্মীদের আটকে রেখে, রেল গেট খোলা রেখে রেল চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট থানার বাহিনীকে লেভেল ক্রসিংগুলির উপর নজর রাখতে। অফিসের ব্যস্ত সময়ে গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংগুলি দিয়ে ভারি ট্রাক, ট্রেলার চলাচলের উপরেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রেল পুলিশের কর্তারা। কারণ, ব্যস্ত সময়ে লেভেল ক্রসিংয়ের উপর ট্রাক বা ট্রেলার খারাপ হয়ে গেলে ট্রেন চলাচল এমনিতেই ব্যাহত হবে।
রেল পুলিশ রাজ্য সরকারের অধীন। রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে, মঙ্গলবার সব ধরনের যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করতে। সেই কারণে, হাওড়া এবং শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রেলের কন্ট্রোল রুম থেকে কোথাও রেল লাইন অবরোধের খবর পাওয়া মাত্রই পর্যাপ্ত বাহিনী পাঠিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অবরোধ তুলে দিতে হবে। অবরোধ সরানোর কাজে দরকারে রেল পুলিশকে সাহায্য করবে জেলা পুলিশও।
রেল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ভোরে দূরপাল্লার যে সব ট্রেন হাওড়া, শিয়ালদহ অথবা কলকাতা স্টেশনে পৌঁছবে, সেই সব ট্রেনের যাত্রীদের যাতে বাড়ি ফিরতে অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কলকাতা শহরের জন্যই নয়, রাজ্যের সব গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ওই দিন ভোরে যে সব যাত্রী নামবেন, তাঁদেরও গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সাহায্য করবে রেল পুলিশ এবং জেলা পুলিশ। রেল পুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র শনিবার বলেন, “সরকারের নির্দেশ কার্যকর করতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা সবই করা হবে। রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সোমবার রেল পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আরও এক দফা বৈঠক হবে।” |