দলীয় কার্যালয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছে জায়গা চাইল বিহার তৃণমূল কংগ্রেস। বিহার তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই নিয়ে দরবার করে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি আবাসন দফতরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বিহার তৃণমূলের মুখপাত্র সুধাংশু রঞ্জন বলেন, “বিহারে বহুজন সমাজ পার্টি, সিপিএম প্রভৃতি দলের অফিস আছে। সে ক্ষেত্রে আমরাও এখানে একটি অফিস পেতে পারি। এই দাবিটাই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” বিহারের তৃণমূল নেতাদের অভিমত, তৃণমূল সর্বভারতীয় দল হতে চলেছে। অচিরে বিহারেও এই দলের অভিষেক হবে। সুধাংশুবাবু বলেন, “আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে কথাও হয়েছে।” সুধাংশুর দাবি, “এপ্রিল মাসে মমতাজি বিহারে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নীতীশকুমারের সর্ম্পক ভাল। কয়েক দিন আগেও কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার গঠন আটকাতে দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কথা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নীতীশ কুমারের অনেক অনুরোধও রক্ষা করেছেন তিনি। নীতীশের কথায় একজনকে রেল বোর্ডের সদস্যও করেছিলেন মমতা। ফলে রাজ্য তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, দুই নেতার মধুর সর্ম্পকের জেরে এখানে একটি দলীয় কার্যালয় পেতে তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না।
তৃণমূল মূলত পশ্চিমবঙ্গের দল। দলের উত্থানও সেখান থেকে। তবে মমতাকে নিয়ে রাজ্য নির্বিশেষে আমবাঙালির আবেগ কম নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায়। প্রথম অবস্থায় নেত্রীর প্রতি আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য দল। বিহারে এখনও অনেক বাঙালির বাস। বিশেষ করে পূর্ণিয়া, ভাগলপুর, কিষাণগঞ্জে বাঙালি ভোটারদের বড় প্রভাব রয়েছে। পাশাপাশি, রাজধানী শহর পটনাতেও বাঙালির সংখ্যা কম নয়। এখানে বাঙালিদের একটি পুরনো সংগঠনও আছে। ৭০’-এর দশকে সিপিআইয়ের সুনীল মুখোপাধ্যায় বিহার বিধানসভার বিরোধী দল নেতা ছিলেন। পরবর্তী কালে বিজেপি-র ডাকসাইটে নেতা ছিলেন জগবন্ধু অধিকারি। বাঙালিদের এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দল প্রাথমিক ভাবে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেছে। সম্প্রতি বিহার তৃণমূল ইউনিটের একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন বাড়ানো হবে। ওই মুখপাত্র বলেন, “বিহারে নীতীশ কুমার ভালই কাজ করছেন। তবে আমরা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি আসনে এই রাজ্যে তৃণমূল প্রার্থী দেবে।”
বিহারের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এখন বদলে গিয়েছে। এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাদের অনেকেই নীতীশের দলে নাম লিখিয়েছেন, নয়তো হালে পানি না পেয়ে কার্যত রাজ্য-ছাড়া। অনেকেই এখন দিল্লিবাসী। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ তো বিহারে প্রায় থাকেনই না। একই অবস্থা রামবিলাস পাসোয়ানেরও। ফলে রাজ্য-রাজনীতিতে বিরোধী নেতার অভাব। নীতীশ কুমারের সময় কালে বিরোধী রাজনীতির ধার ধীরে ধীরে কমে আসছে। এই পরিস্থিতিতে বিহার তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, এখানে বিরোধী দলের জায়গাটি ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সেই শূন্য স্থান পূরণ করতে পারে তৃণমূল। |