উত্তরপ্রদেশে এখনও দু’দফার ভোটগ্রহণ বাকি। তার আগে রাহুল গাঁধী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা বারবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনার কথা উস্কে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তা নিয়ে এখন কংগ্রেসের মধ্যেই মতান্তর দেখা দিয়েছে। দলের ওয়ার্কিং কমিটির কয়েক জন প্রবীণ নেতার মতে, উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি কোনও বিকল্পই নয়। কেননা, সংসদে সেই প্রস্তাব পাশ করাতে কেউ সমর্থন জানাবেন না। দ্বিতীয়ত, ভোট চলাকালীন ক্রমাগত রাষ্ট্রপতি শাসন তথা রাজনৈতিক অস্থিরতার জুজু দেখালে উল্টে রাজনৈতিক ফায়দা হয়ে যেতে পারে মুলায়ম সিংহ বা মায়াবতীর। যদিও প্রকাশ্যে রাহুল গাঁধী নিজে এখনও উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনার কথা বলেননি। কিন্তু মাসখানেক ধরে ভোটের প্রচারে তিনি বারবারই বলেছেন, কংগ্রেস নিজের সরকার গড়তে পারলে ভাল কথা। নয়তো অন্য কারও সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবে না। রাহুলের এই মন্তব্য থেকেই রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে জল্পনার সূত্রপাত। কারণ, বিভিন্ন প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষায় অন্যতম যে সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, তা হল বিধানসভায় একক গরিষ্ঠতা না পেলেও মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টি সব চেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে মায়াবতী, বিজেপি-কে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সপা-কংগ্রেস জোট সরকারই পথ। কিন্তু ওই অবস্থাতেও কংগ্রেস যদি মুলায়মকে সমর্থন না জানায়, তবে রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া বিকল্প কী রইল?
জল্পনা আরও উস্কে দেয় রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা দিগ্বিজয় সিংহের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যও। তা হল, “উত্তরপ্রদেশে এ বার কেউই একক গরিষ্ঠতা না-ও পেতে পারে। আবার জোট সরকারও হবে না। তাই রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” এর পরে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল আবার এক ধাপ এগিয়ে কানপুরে বলেন, “গরিষ্ঠতা পেলে কংগ্রেস সরকার গড়বে। নয়তো বিরোধী আসনে বসবে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।” তাঁর এই মন্তব্যকে ‘ভোটারদের প্রতি হুমকি’ বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে কমিশন কাল তাঁকে কারণ-দর্শানোর নোটিসও পাঠিয়েছে গত কাল।
যদিও কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, দিগ্বিজয়-শ্রীপ্রকাশদের মাধ্যমে আসলে এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে, এ বারের ভোটে কংগ্রেস ভাল মতোই লড়াইয়ে রয়েছে। এবং রাজ্যে কংগ্রেসের গুরুত্ব মায়া-মুলায়মের থেকে কম নয়। লক্ষ্য একটাই, মায়াবতী ও মুলায়মের ভোটব্যাঙ্কেও ভাগ বসানো।
কিন্তু দলের প্রবীণ নেতাদের মতে, পাঁচ দফার ভোটের পর এখন যখন মোটামুটি এই ধারণাই তৈরি হয়েছে যে, সপা ভাল ফল করছে। এমনকী, মায়াবতীর ঘাঁটি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেও। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা বলা মানেই অস্থিরতার কথা উস্কে দেওয়া। মানুষ এতে স্থায়ী সরকার পাওয়ার লক্ষ্যে মুলায়ম বা মায়াবতীর দিকে ঝুঁকবেন। কারণ এই দুই আঞ্চলিক শক্তিই এর আগে স্থায়ী সরকার দিয়েছে রাজ্যে।
কংগ্রেসের ওই প্রবীণ নেতাদের এ-ও বক্তব্য যে, উত্তরপ্রদেশে কেমন সরকার হবে, সেটা নির্ভর করবে ভোটের ফলের উপরে। এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আর রাষ্ট্রপতি শাসন যদি জারি করতেই হয়, ছ’মাসের মধ্যে তা সংসদে পাশ করানো শক্ত হবে। বিজেপি-বসপা-সপা কেউই তা সমর্থন করবে না। বরং বিজেপি-বসপা জোট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাদের ঠেকাতে তখন সপা-কে সমর্থনের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতাও তৈরি হবে কংগ্রেসের সামনে।
রাহুল-ঘনিষ্ঠরা অবশ্য মনে করছেন, মুলায়মের সরকারকে সমর্থন করলে দীর্ঘমেয়াদে কংগ্রেসেরই ক্ষতি হবে। দুই আঞ্চলিক শক্তির দুর্গে ভাঙন ধরিয়ে জমি দখল করতে রাহুল যে পরিশ্রম করেছেন, তা-ও পণ্ডশ্রমে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কংগ্রেসের বর্ষীয়ানদের বক্তব্য, তারও দাওয়াই রয়েছে। দরকারে মুলায়ম সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানাতে পারে কংগ্রেস। অর্থাৎ সরকারে সামিল না হলেই হল।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি যা-ই দাঁড়াক বিজেপি-ও রাহুলের মতোই বসপা-র সঙ্গে জোট গড়ার সম্ভাবনা আপাতত উড়িয়ে দিচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সম্ভাবনার কথা বলছেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথও। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য, এগুলো ভোটের আগে বলার জন্য। ভোটের পর বিজেপি-ও মায়াকে সরকার গঠনে সমর্থন জানাতে পারে। তখন বিরোধী আসনেই বসতে হবে কংগ্রেসকে। তার আগে অন্তত রাষ্ট্রপতি শাসন জারির জল্পনা উস্কে না দিয়ে কংগ্রেস বরং মায়া-মুলায়মের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারটুকুই শুধু চালিয়ে যাক। |