আগামী মঙ্গলবার ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘটে কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। কারণ, এর আগে যত বার বাম ইউনিয়নগুলি ধর্মঘট ডেকেছে, বিমানবন্দরে তার প্রভাব পড়েছে। তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বাম সরকার। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এটাই প্রথম ধর্মঘট। রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস সেই ধর্মঘটের বিরোধিতা করলেও, বিমানবন্দরের সাধারণ সাফাইকর্মী থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের বেশির ভাগই এখনও বাম ইউনিয়ন ঘেঁষা। তাই ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁরা কাজে না এলে উড়ান চলাচল ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। যদিও ‘এয়ারপোর্ট ডিরেক্টর’ বি পি শর্মা বলেছেন, “ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার এক অফিসার বলেন, “এর আগে প্রতি বার আমরা বলে দিয়েছি, কলকাতা থেকে উড়ান চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজ্যে সরকার বদলেছে।” কিন্তু বিমানবন্দরের ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্কমেন ইউনিয়ন’ এখনও বামেদের দখলে। এই ইউনিয়নের সদস্যেরা সবাই ঠিকাদারের কর্মী। তাঁরাই নিয়মিত বিমানবন্দরে গিয়ে সাফাই, গাড়ি চালানো, কনভেয়ার বেল্ট চালানো, এরোব্রিজ চালানো, বিমান পরিষ্কার করা, যাত্রীদের মালপত্র বিমানে তোলা-নামানোর কাজ করেন। এই ইউনিয়নের নেতা স্বপন গুপ্ত শনিবার বলেন, “আমাদের সঙ্গে দু’হাজার কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক পালা বদলের পরে ২০ শতাংশ অন্য দিকে চলে গিয়েছেন। তার পরেও আমাদের সদস্যেরা কাজ না করলে উড়ান পরিষেবা ব্যাহত হবে।” অন্য দিকে, তৃণমূলের নবগঠিত ‘কনট্র্যাকচুয়াল লেবার ইউনিয়ন’-এর নেতা বরুণ নট্ট দাবি করেছেন, বিমানবন্দরের পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, “আজ মিছিল করেছি। আমাদের শক্তি কতটা, তা ওরা দেখে নিয়েছে। জোর করে কিছু বন্ধ করতে গেলে আমরা রুখব। আমাদের কর্মী দিয়ে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানো যাবে।” এত দিন ধরে বাম ঘেঁষা বলে পরিচিত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মী ইউনিয়নের সদস্যেরা ধর্মঘট সমর্থন করলেও সে দিন কাজ বন্ধ করবেন না বলে জানা গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দিশাহারা বিমান সংস্থার কর্তারা। প্রতিদিন সকালে দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাই থেকে বিমান কলকাতায় এসে অন্য শহরে উড়ে যায়। সারা দিন সেই বিমানই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাত্রী নিয়ে উড়ে বেড়ায়। বিমান সংস্থার কর্তাদের আশঙ্কা, সকালে বিমান কলকাতায় আসার পরে ধর্মঘটের কারণে আটকে পড়লে সারা দিন বিমানটিকে বসিয়ে রাখতে হবে। তাতে দেশের অন্য প্রান্তের উড়ানসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শনিবার এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আগামী মঙ্গলবার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী কলকাতা থেকে উড়ান চালাবে। কারণ অন্য বেসরকারি সংস্থার তুলনায় তারা খুবই কম সংখ্যক ঠিকাদারের কর্মীদের দিয়ে কাজ করায়। ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ হিসেবে কলকাতা থেকে বিমানচালক ও বিমানসেবিকাদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। বাইরে থেকে উড়ান নিয়ে যে বিমানচালক ও বিমানসেবিকারা কলকাতায় আসবেন, তাঁদের দিয়েই ফিরতি উড়ান চালানোর চেষ্টা করা হবে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মঘটের দিন যাত্রীরা কী করে বিমানবন্দরে পৌঁছবেন? নিয়মিত উড়ান চললে কোনও যাত্রী যদি সে দিন বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পারেন, তা হলে তাঁর টিকিটের টাকা কি নষ্ট হবে? এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মঙ্গলবার কেউ উড়ান ধরতে না পারলে, বিষয়টি বিশেষ ভাবে বিচার করা হবে। যদিও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, কলকাতা থেকে উড়ান চালানোর মতো পরিস্থিতি থাকলেও সকাল ও সন্ধ্যার দিকে হয়তো কয়েকটি উড়ান চালানো হবে। কমিয়ে দেওয়া হবে উড়ান সংখ্যা। |