নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ
বিটি রোড থেকে বালি, ‘কুকর্মে’র বিস্তৃত আখড়া
রাহনগরের ঝুপড়িবাসী মহিলার সঙ্গে যা ঘটেছে, সন্ধের পরে ওই তল্লাটে তা যে কোনও মহিলার সঙ্গেই ঘটতে পারে বলে মনে করেন নিয়মিত পথচারীদের অনেকেই। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) ক্যাম্পাস লাগোয়া সন্ধের বিটি রোড থেকে শুরু করে বালি পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার ঢিলেঢালা পুলিশি নজরদারির চেহারাটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, আম-নাগরিকের জন্য কতটা ‘নিরাপদ’ ওই অঞ্চল।
আইএসআই-এর গেটের উল্টো ফুটেই ফি-সন্ধে জমজমাট ট্রাক-লরির ‘পার্কিং লট’। কাছেই সুভাষপল্লির বাসিন্দা এক তরুণীর (নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কথায়, “রাত আটটার পরে ওই তল্লাটে একা মেয়েদের পক্ষে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব। অন্ধকার রাস্তার ধারে বসে বুক ফুলিয়ে মদ খেতে খেতে চালক-খালাসিরা যে ভাষায় মন্তব্য ছুড়ে দেন, তাতে ভয়ে কুঁকড়ে যেতে হয়।” স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, “একটু বেশি রাতে ‘ফ্লাইং’ যৌনকর্মীরাও ওই তল্লাটে খদ্দের ধরতে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছু বহিরাগত যুবকও রাস্তার ধারে আসর বসায়। কালে-ভদ্রে পুলিশ দেখা গেলেও তারা কেউ ওই ছেলেদের ঘাঁটায় না।”
সকলেই একমত, কোনও দরকারে বেরোতে হলে রাতে একা মহিলাদের পক্ষে ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়া অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আইএসআই-এর সামনে ওই এলাকা থেকেই ধর্ষণের মতলবে ঝুপড়িবাসী মহিলাকে ম্যাটাডর ভ্যানে তোলা হয় বলে অভিযোগ।
ডানলপ মোড় থেকে বাঁ দিকে ঢুকে নিবেদিতা সেতু বা বালি সেতু লাগোয়া বিস্তৃত এলাকা জুড়েই পুলিশি টহল ‘বিরল’ বলে অভিযোগ এলাকার লোকের। ধর্ষিতা মহিলার বয়ান অনুযায়ী, নিবেদিতা সেতুর নীচে যেখানে ম্যাটাডর দাঁড় করিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয়, সেখানেও নির্জন অন্ধকার পরিবেশ।
আর নিবেদিতা সেতুর টোল-প্লাজার সমান্তরাল রাস্তায় এমনকী লরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে বলে মানছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ধর্ষণের পরে মহিলাকে ওখানেই মাঠের ধারে ফেলে রেখে পালায় দুষ্কৃতীরা।
রাজ্য পুলিশের নবগঠিত দু’টি কমিশনারেট, ব্যারাকপুর ও হাওড়ার অন্তর্গত এই অঞ্চলের ছবিটাই বলে দিচ্ছে, আদতে পুলিশি নজরদারির চেহারাটা কতটা ‘উন্নত’ হয়েছে। ব্যারাকপুরের কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কিন্তু দাবি, “এমন নয় যে ওই এলাকায় পুলিশি টহলের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু দুভার্গ্যজনক ভাবে বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনার সময়ে আইএসআই-এর সামনে কোনও পুলিশ ছিল না।” তাঁর কথায়, “আমাদের টহলদার গাড়ির অভাব আছে। কিন্তু একেবারে গাড়ি নেই, তা বলা যায় না। কয়েক মাসের মধ্যে বাড়তি গাড়ি আমদানির বিষয়টাও রাজ্য সরকার মাথায় রাখছে।”
হাওড়া কমিশনারেটের তরফে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (নর্থ) রূপেশ কুমার অবশ্য মানছেন, পরিকাঠামোর অভাবে পুলিশকে ভুগতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “বালির দিকে জাতীয় সড়কের এলাকায় পুলিশের একটিমাত্র মোবাইল ভ্যান ঘোরাঘুরি করে। একটা গাড়ির পক্ষে সব দিক সমান ভাবে দেখা সম্ভব হয় না।”
বাস্তবে কলকাতা থেকে বাইরে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘করিডর’ ডানলপ মোড় লাগোয়া এলাকায় রাতের পরিবেশ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যথেষ্ট আতঙ্ক রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর ঝুপড়ি এলাকায় নেশাখোরদের উৎপাত। পথচারীদের টাকাকড়ি ছিনতাই বা ইভটিজিং-এর অভিযোগও আকছার ওঠে। কেউ কোনও দুষ্কর্ম ঘটিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে।
দক্ষিণেশ্বরের কাছে তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা রমা আদিত্য বলেন, “রাতে পিডব্লিউডি রোড ধরে ডানলপের দিকে যেতে ভয় করে। নিবেদিতা সেতুর নীচে ট্রাকের গাদাগাদি। নানা রকমের গোলমেলে কারবার চলে। সব আছে, পুলিশ নেই। বেশ কয়েক বার কটূক্তিও শুনেছি। ওই মহিলার ব্যাপারটা শুনে ইস্তক শিউরে উঠছি।”
পুলিশ মানছে, হাওড়া কমিশনারেটের এলাকায় সার্ভিস রোড বা আইএসআই লাগোয়া তল্লাট-দু’জায়গাতেই বেআইনি ভাবে চালু ট্রাক-লরির পার্কিং লট। আর সেখানেই নানা দুষ্কর্মের ‘উৎস’। পুলিশ-কর্তারা ঠারেঠোরে বলছেন, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই ট্রাক-লরির ওই পার্কিং ঠেকানো যাচ্ছে না।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.