গায়ে কাপড় দেন ২ তরুণী
ডাকছিলেন মহিলা, পাগল ভেবে ঘেঁষেননি পথচারীরা
নিবেদিতা সেতুর রাজচন্দ্রপুর টোল-প্লাজার সমান্তরাল রাস্তাটার ধারে মাঠে পড়েছিলেন তিনি। পরনে পোশাক নেই। কোনও মতে হাতের ইশারায় পথচলতি লোকজনকে অস্ফুটে ‘ভাইয়া, বহেনজি’ বলে ডেকে কী যেন বলতে চাইছিলেন ওই মহিলা।
শুক্রবার সাতসকালের দৃশ্যটা ২৪ ঘণ্টা বাদেও রেশমি সাহা বা টগরী বিশ্বাসকে তাড়া করছিল।
হনহনিয়ে হাঁটতে থাকা প্রাতর্ভ্রমণকারীরা অনেকেই মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। কিন্তু ‘পাগল’ ভেবে গা করেননি। থমকে দাঁড়িয়েছিলেন রেশমি-টগরীরাই। মহিলার জন্য পোশাক আনতে ওঁরা তখনই সুকান্তপল্লিতে নিজেদের বাড়ি ফিরে যান। রক্তাক্ত দেহটা তুলে পোশাক পরাতে না-পারলেও কাপড়ে ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। শনিবার সকালে খবরের কাগজ পড়ে ওই মহিলাকেই ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
শুক্রবার, সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ রাজচন্দ্রপুর সার্ভিস রোডের ধারে ওই মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন রেশমীরা। মহিলাকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে কিন্তু সাড়ে ন’টা বেজে যায়।
মৃতার পরিবার। — নিজস্ব চিত্র
কেন? বালি থানার পুলিশের দাবি, আহত অবস্থায় এক মহিলার পড়ে থাকার খবরটা তারা পেয়েইছিল বেলা ন’টা নাগাদ। পুলিশে খবর দিতে এত দেরি হল কেন? রেশমি আর টগরী বলছেন, তাঁরা তখনই পাড়ার লোকেদের ডেকে পুলিশে খবর দিতে বলেছিলেন। এর পরে কখন কী হয়, তাঁদের জানা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা এ দিন সকালে মাঠটায় জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের এক জন, সোম দাস দাবি করলেন, “কয়েক বছর আগেও রাজচন্দ্রপুর স্টেশনের কাছে এক মহিলা পানাপুকুরে পড়েছিলেন। সে বার পুলিশে খবর দিয়ে উল্টে আমাদেরই গালমন্দ শুনতে হয়েছিল। পুলিশ বলেছিল, কোথাকার ‘রাস্তার পাগলে’র জন্য কীসের মাথাব্যথা? এ বারও পুলিশ কী বলবে ভেবেই আমরা প্রথমে ওদের খবর দেওয়ার সাহস করিনি।”
পরে অবশ্য এলাকার লোক মারফতই ফোনে পুলিশ খবর পায়। এর পরে থানার গাড়ির অভাবে মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ে তারা। শেষ পর্যন্ত পুলিশের তরফে নিবেদিতা সেতু টোল-প্লাজার কর্তৃপক্ষকে ফোন করে মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। টোল-প্লাজার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্তা লালাকৃষ্ণকিশোর রায় বলেন, “পুলিশ কেসের ঘটনা বলে কী করা উচিত, তাই নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। শেষ অবধি মানবিকতার খাতিরে নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” সাড়ে ন’টা নাগাদ টোল-প্লাজার অ্যাম্বুল্যান্সে মহিলাকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সকাল ন’টায় বালির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় পুলিশের গাড়ি ছিল না কেন? পুলিশ-কর্তারা পরিকাঠামোর অভাবের দোহাই পেড়েছেন।
সার্ভিস রোড লাগোয়া মাঠে যেখানটায় মহিলা পড়েছিলেন, এ দিন সকালেও সেখানে ঘাসে শুকনো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। পুরো খবরটা জানার পরে রেশমি-টগরী দু’জনের গলাতেই আফশোস ঝরে পড়ছিল। দুই তরুণী বারবার বলছিলেন, “ওই মহিলার সঙ্গে এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে, আমরা কেউই বুঝিনি। আর একটু আগে মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো উনি বাঁচতেন।” মাটের উপরে ভিড় করা জটলাটাও একই কথা বলছে।
ডানলপের মোড়ের কাছে সিনেমা-হলের পিছনে যে ঝুপড়িতে ওই মহিলা থাকতেন, এ দিন সেখানকার পরিবেশও থমথমে। মৃতার প্রতিবেশী সানারা বিবি বলেন, “গরিব মানুষ কাগজ কুড়িয়ে টেনেটুনে দিনে ৩০ টাকা রোজগার করত। অসময়ে ভরসন্ধ্যায় কাগজ কুড়োতে বেরিয়ে যেত। ওর যে এমন ঘটবে কে ভেবেছিল!” স্বামী-বিচ্ছিন্না মহিলার বড় ছেলে রতন দাস তখন মায়ের দেহ আনতে উত্তরপাড়ার হাসপাতালে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন। বললেন, “শেষ কাজটুকু করার পয়সাও নেই। কী যে হবে, মাথায় ঢুকছে না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.