১০ই উত্তরবঙ্গ সফরে শিলিগুড়িতে মমতা
জল ওই এক দিনই, বিপন্ন বোরো চাষি
ক দিনই ক্যানেলে ভরা জল ছিল। বাকি দিনগুলিতে শুখা। ক্যানেলের দিকে আঙুল দেখিয়ে এমনই বললেন খড়িয়া এলাকার কৃষক ধনঞ্জয় রায়। বোরো চাষের জন্য নতুন এলাকায় ক্যানেলে জল ছাড়া হবে বলে ঘোষণা করেছিল সেচ দফতর। পাট বা আলু চাষ করতে নিষেধ করা হয়েছিল জলপাইগুড়ির খড়িয়া, মন্ডলঘাট, নন্দনপুর, গড়ালবাড়ি এবং বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের তিস্তা ক্যানেল লাগোয়া এলাকার কৃষকদের। সরকারি নির্দেশমত বোরো চাষ করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন প্রায় ১৮ হাজার ছোটবড় কৃষক। চাষিরা জানাচ্ছেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ক্যানেলে জল ছাড়া হলেও সেই জল তলানিতেই পড়ে রয়েছে। যা দিয়ে জমিতে জল নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। এতদিন প্রায় চার বিঘে জমিতে পাটের চাষ করতেন খড়িয়ার চৌধুরীপাড়ার ধনঞ্জয় রায়। এবারে ক্যানেল জল দেওয়া হবে বলায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বোরো চাষে খরচ করে ফেলেন। তিনি বলেন, “জমিতে হাল দিয়েছি, বীজতলা করেছি। কিন্ত তিন মাস ধরে জল নেই। বীজতলা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চাষ করেছিলাম তাতেই বিপদে পড়ে গেলাম। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।” সরকারি তথ্য বলছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারিতে সর্বাধিক পরিমাণ জল ছাড়া হয় ক্যানেলে। পরেরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ক্যানেল উপচে জল পড়ে।
অপর্যাপ্ত জল।
ঘটনাচক্রে সেদিনই শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রী এসেছিলেন উত্তরবঙ্গ উৎসবে যোগ দিতে। তার পর থেকে ফের জলের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এতে জেলার অন্তত সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে বোরো চাষ বিপর্যয়ের মুখে বলে কৃষি দফতর থেকে রাজ্যকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের উত্তরবঙ্গের অধীক্ষক বাস্তুকার গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যানেলের মেরামতির কাজ বাকি রয়েছে। একটি লকগেট তৈরি করে বেশি পরিমাণ জল ক্যানেলে ছাড়ার চেষ্টা চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যানেলে থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।” তিস্তা সেচ প্রকল্পের তরফে গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘোষণা করা হয়েছিল ক্যানেলে এবারে ৪১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়া হবে। এবং ছোট বা মাইনর ক্যানেলে জল ছাড়া হবে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে খড়িয়া, গড়ালবাড়ি, নন্দনপুর, মন্ডলঘাট এবং বেলাকোবার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবারেই প্রথম জল দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে খড়িয়া এলাকার ক্যানেলে একেবারে নিচে সরু সুতোর মতো জল বইছে।
খটখটে ক্যানাল।
ক্যানেলের মাঝামাঝি থাকা যে পাইপ দিয়ে জল চাষের জমিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তারও অন্তত দুই ফুট নিচে জলের স্তর রয়েছে। এতে জল কোনও ভাবেই জমিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পোড়াপাড়ার বীরেন রায় বলেন, “নিজের জমি নেই। আমি ভাগচাষি। গতবার পাট-আলু করেছিলাম। এবার সরকারি আধিকারিকরা জোর করেই বোরো চাষ করতে বললেন। মহাজনের থেকে চড়া সুদে টাকা ধারও করলাম। কিন্তু জল নেই। বোরো হচ্ছে। জমি ফাঁকা পড়ে থাকল। এর থেকে আগের পাট বা আলুর মতো চাষই ভাল ছিলয় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বোরো চাষ করতে হয়। জলপাইগুড়ির কৃষি বিভাগের সহকারি অধির্কতা নবেন্দু বসাক বলেন, “সেচ বিভাগের ঘোষণা মত আমরাই কৃষকদের বোরো চাষ করতে বলেছিলাম। এখন জল না পেয়ে সকলেই আমাদেরকে দোষারোপ করছেন। প্রচুর স্মারকলিপি জমা পড়েছে। সবই সেচ দফতর এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
সন্দীপ পালের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.