কেন্দ্রের দেওয়া টাকা খরচের জন্য তাদের আর অর্থ দফতরের সম্মতির অপেক্ষায় থাকতে হবে না। নিজেদের আওতাধীন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে বরাদ্দ কেন্দ্রীয় টাকা ট্রেজারিতে চলে এলে তারা নিজেরাই তা স্বাধীন
ভাবে খরচ করতে পারবে। দীর্ঘকালের রীতি ভেঙে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ১৪টি দফতরকে এই ক্ষমতা দিয়েছে অর্থ দফতর।
অর্থ দফতরের ঘরে ‘ফাইল আটকে’ থাকার অভিযোগ বহু পুরনো। যে কারণে জনকল্যাণের বহু প্রকল্পের কাজ শুরু করতে অহেতুক সময় নষ্ট হয় বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দফতরের তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে একাধিক দফতরের মন্ত্রী সমস্যাটির সুরাহা চেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সেখানেই অর্থ দফতরের কাজে গতি আনার পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন বলে সরকারি-সূত্রের খবর। |
এবং অনেকটা তারই সূত্র ধরে এ বার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নতুন সিদ্ধান্ত। এক কথায় যাকে তিনি ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’ হিসেবে অভিহিত করছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অর্থ দফতরের কাজে সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজে গতি আনার কথা বলেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ধাপে বেশ কিছু সরকারি দফতরকে টাকা খরচের ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হল।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, গরিবের জন্য বাসস্থান বা গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের মতো কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার দু’ভাবে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। কিছু প্রকল্পের সব টাকা কেন্দ্র জোগায়। আবার কিছু প্রকল্পের আংশিক ব্যয়ভার রাজ্যকেও বহন করতে হয়। দু’ক্ষেত্রেই বরাদ্দ টাকা খরচ করতে গেলে এত দিন সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানিয়ে ফাইল পাঠাতে হতো অর্থ দফতরে। বিভিন্ন অর্থ-কর্তার হাত ঘুরে তা অনুমোদিত হওয়ার পরে টাকা খরচ করা যেত। অনেক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ফাইল ফেরত পাঠানো হতো। আর এ ভাবে শুধু ফাইল চালাচালিতে গড়িয়ে যেত বিস্তর সময়। ফলে প্রকল্পের কাজে গতি তো আসতই না, অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের টাকা ফেরতও চলে যেত।
অর্থ-সূত্রের খবর: এই সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে আপাতত কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, মাদ্রাসা শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, নগরোন্নয়ন-সহ মোট ১৪টি দফতরকে টাকা খরচের ‘স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে। শুধু কেন্দ্রের টাকা নয়, তারা রাজ্য বাজেটে পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ অর্থের ৭৫% এখন থেকে স্বাধীন ভাবেই খরচ করতে পারবে, তখনও অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়ে লিখিত আবেদন বা ফাইল পাঠাতে হবে না। দফতরের সচিব বা অতিরিক্ত সচিবই প্রকল্পের টাকা খরচের ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
অর্থ-কর্তাদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় অর্থমন্ত্রীর ঘরে ফাইলের স্তূপ জমবে না। দফতরগুলো ট্রেজারিতে টাকা এলেই কাজে নামতে পারবে। তা-ই নয়, বিভিন্ন দফতর যেমন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তেমন তাদের দায়িত্ববোধও বাড়বে বলে আশা অর্থ দফতরের কর্তাদের। |