‘সস্তায় প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রা’ বিক্রির নামে জালিয়াতি
ঢাকনা সরাতেই ঘড়ার ভিতরে সোনার মোহর চকচক করে উঠল। তবে একটু ধুলো-মাটি মাখা। যেন এখনই মাটি খুঁড়ে তোলা হয়েছে। ‘প্রাচীন সোনার মোহর’ যে দামে বিক্রি হবে, তা শুনে ক্রেতার চক্ষু চড়কগাছ। এত সস্তা! তড়িঘড়ি নগদ টাকা ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিনে বাড়ি ফিরলেন ক্রেতা। পরে জানা গেল, পুরোটাই ভাঁওতা। মুদ্রাগুলি সোনার তো নয়ই, প্রাচীনও নয়। কিন্তু তত ক্ষণে ক্রেতার লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব।
সম্প্রতি সল্টলেকের এক বৃদ্ধা এবং সোনারপুরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এ ভাবে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক জালিয়াত চক্র। জাঙ্গিপাড়া থানায় ওই দু’টি ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিতরা। ধরা পড়ে ছ’জন। তবে জালিয়াত-চক্রের মূল পান্ডা অধরা। এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই চক্রের কিছু দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরেছে। উদ্ধার হয়েছে কিছু টাকা। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ-কর্তাদের পরামর্শ, এ ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সর্তক থাকতে হবে। অকারণ ‘প্রলোভন’ এড়াতে পারলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে।
কী ভাবে ঘটল প্রতারণা? হুগলি জেলা পুলিশ জানিয়েছে, সল্টলেকের বাসিন্দা সীমা রোঠির ফোন নম্বর কোনও ভাবে জোগাড় করেছিল প্রতারকরা। সীমাদেবীকে ফোনে তারা জানায়, সস্তায় কিছু প্রাচীন মুদ্রা বিক্রি করতে চায় তারা। একাধিক বার ফোনে কথা বলে সীমাদেবীর ‘ভরসা’ অর্জন করে। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধা জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুরে যান প্রতারকদের দেওয়া নির্দিষ্ট ঠিকানায়। সেখানে ‘প্রাচীন সোনার মুদ্রা’র বিনিময়ে ওই বৃদ্ধা নগদ ৫ লক্ষ টাকা দেন ওই চক্রের পান্ডাদের। সীমাদেবী পরে জানতে পারেন, সমস্ত মুদ্রাই জাল।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
সীমাদেবীর ছেলে অভিষেক রোঠী বলেন, “আমাদের বাড়িতে সুরেশ নামে এক ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি কাজ করে গিয়েছে। তার মাধ্যমে আঁটপুরের ওই দুষ্ট-চক্রের লোকজন মায়ের ফোন নম্বর পায়। মা সেখানে যান। বাদল মালিক এবং মোহন মালিকের বাড়িতে জাল মুদ্রা দিয়ে মায়ের কাছ থেকে ওরা টাকা হাতিয়ে নেয়।” অভিষেক বলেন, “টাকা হাতানোর জন্য বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে এক বৃদ্ধের হাত দিয়ে মাটি-মাখানো পুরনো ঘড়া নিয়ে আসে প্রতারকেরা। মাটি খুঁড়ে ওই ঘড়ার মধ্যেই প্রাচীন সোনার মুদ্রা মিলেছে তারা মাকে বলে। বয়স্ক মানুষ ওদের চালাকি ধরতে পারেননি।”
সোনারপুরের এক ব্যবসায়ীকেও একই কায়দায় বোকা বানিয়ে অন্তত ২৩ লক্ষ টাকা পায় প্রতারকেরা। এ ক্ষেত্রে কাগজে একটি বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে রাজবলহাটের জনৈক বিশ্বনাথ মালিক ওই ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর জোগাড় করে। ‘মাটির তলা থেকে পাওয়া প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রা’র গল্প ফেঁদে একাধিক বার ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলে। পুরো বিষয়টি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে তোলার জন্য প্রাথমিক ভাবে ওই ব্যবসায়ীকে কয়েকটি মাটি মাখানো আসল সোনার মুদ্রাও দেয় প্রতারকেরা। ওই ব্যবসায়ী তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন। তারপর মোট দু’টি ঘটিতে ৬৭০টি মুদ্রা দেওয়া হয় তাঁকে। সেগুলি সবই জাল।
সোনারপুরের ওই ব্যবসায়ী এবং সল্টলেকের অভিষেক রোঠী তদন্তকারী অফিসারদের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বার বার থানা, জেলা এবং রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানানো হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চক্রের মূল পান্ডারা এখনও অধরা। পুলিশ আরও তৎপর হলে সাধারণ মানুষ এ ভাবে প্রতারিত হতেন না।
কিন্তু ‘মোহরের’ খোঁজ পেয়েও কি ক্রেতারা কেউ খবর দিয়েছিলেন পুলিশকে? পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, “তখন কেন মনে এল না পুলিশের কথা। তা হলে তো এত কাণ্ডই ঘটত না!”
হুগলি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “অরুণ আদক নামে ওই চক্রের এক মাথাকে পুলিশ গত মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে। অন্য এক চাঁই পলাতক। হরিপালের পালগাছা এলাকায় একটি চক্র সক্রিয়। ওই সব চক্রে রাজনীতির লোকজনও জড়িত। স্থানীয় এক নেতার নাম পাওয়া গিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.