জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। আর প্রশ্নপত্র-বিভ্রাটে বেশ কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হল মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই।
কোথাও নতুন পাঠ্যক্রমের পড়ুয়াদের দেওয়া হয়েছে পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্র। কোথাও হল এর উল্টোটা। এই ধরনের পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকায় যেমন আছে সালকিয়া বিদ্যাপীঠ, বলরামপুর ফুলচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুরহাট গার্লস স্কুল, বজবজ কালীপুর বয়েজ স্কুল, স্বরূপনগর বিথারি কে পি হাইস্কুল, তেমনই আছে কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল। এই নিয়ে পরপর দু’বছর বড় ধরনের প্রশ্ন-বিভ্রাট ঘটল মাধ্যমিকে। গত বার উত্তরবঙ্গের একটি কেন্দ্রে ইতিহাসের পরীক্ষায় ভৌতবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছিল।
শুক্রবার ভুল প্রশ্নপত্র বিলি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পরে কোনও কোনও কেন্দ্রে ঠিক প্রশ্নপত্র দিয়ে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও তা-ও করা হয়নি। ভুল প্রশ্নপত্রেই পুরো পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, যে-সব পরীক্ষার্থী প্রশ্ন-বিভ্রাটের শিকার হয়েছে, তাদের বিষয়টি ‘সহানুভূতি’র সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এমন ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন পর্ষদ-সভাপতি চৈতালি দত্ত। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্তির দায় কে নেবে, তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
প্রথম দিনে ছিল প্রথম ভাষার পরীক্ষা। এ বছর থেকে মাধ্যমিক হচ্ছে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই এই পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। যে-সব পড়ুয়া আগের বার মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়েছে বা পরীক্ষা দিতে পারেনি, শুধু তাদেরই পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার কথা। একসঙ্গে দু’ধরনের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হলে যে-বাড়তি সতর্কতা দরকার, এ দিনের বিভ্রাটই বলে দিচ্ছে, সেই সতর্কতার অভাব ছিল। |
সাউথ পয়েন্টে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পরে উর্দুর জনা দশেক পরীক্ষার্থী বুঝতে পারে, তারা এত ক্ষণ যে-প্রশ্নপত্রের উত্তর লিখেছে, সেটি পুরনো পাঠ্যক্রমের। অর্থাৎ সেটি নবম-দশমের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে তৈরি প্রশ্ন। মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের ওই পড়ুয়ারা নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থী। বিভ্রাটের বিষয়টি শিক্ষকদের জানানোর পরে নতুন পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। দু’ঘণ্টা পরীক্ষার পরে নতুন করে উত্তর লিখতে শুরু করে পরীক্ষার্থীরা। যে-পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা বেলা ৩টেয়, তা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। ওই পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই জানিয়েছে, এত দীর্ঘ সময় লিখতে হয়েছে বলে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি। ভুলটা যে স্কুলের তরফেই হয়েছে, তারা তা স্বীকার করেছে বলে জানান পর্ষদ-সভাপতি। তিনি বলেন, “সাউথ পয়েন্টের মতো স্কুলে এমন ঘটনার খবর অপ্রত্যাশিত। এতে তো পর্ষদের কোনও ত্রুটি নেই। তবু আমি ক্ষমা চাইছি। সকলকে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন আর একটু সতর্ক হোন।” ভুল স্বীকার করেও সাউথ পয়েন্টের মুখপাত্র কৃষ্ণ দামানি বলেন, “পুরনো পাঠ্যক্রমের কোনও পড়ুয়ার আসন আমাদের স্কুলে পড়েনি। তবু ওই পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্র স্কুলে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকেরা তা না-দেখে বিলি করেছেন।” পর্ষদের দাবি, ওই স্কুলে দু’ধরনের পড়ুয়ারই আসন পড়েছে।
বজবজ কালীপুর বয়েজ স্কুলে পুরনো পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যক্রমের এবং নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থীদের পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন দেওয়া হয়। ভুল ধরা পড়ে ঘণ্টা দুয়েক পরে। পর্ষদের অনুমতি নিয়ে সেখানে ছ’জন পরীক্ষার্থীর ফের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
হাওড়ার সালকিয়া বিদ্যাপীঠে পরীক্ষা দিচ্ছে হাওড়া হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্রেরা। সেখানে নতুন পাঠ্যক্রমের ২৪ জন ছাত্রের মধ্যে পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়। অভিযোগ, পরীক্ষার্থীরা বিষয়টি স্কুল-কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষার পরে অভিভাবকেরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান। একই ঘটনা ঘটে স্বরূপনগরের বিথারি কে পি হাইস্কুল এবং পুরুলিয়ার বলরামপুর ফুলচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বীরভূমের বসোয়া গার্লস হাইস্কুলের এক পরীক্ষার্থীকেও ভুল প্রশ্ন দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি নজরে আসে আধ ঘণ্টার মধ্যেই। ওই পরীক্ষার্থীকে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। বাড়তি সময়ও পায় সে।
গত বছর মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষার দিন শিলিগুড়ির একটি কেন্দ্রে ভৌতবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র বিলি হয়ে গিয়েছিল। এ বার যাতে তেমন কোনও ঘটনা না-ঘটে, সেই জন্য বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও এত স্কুলে এমন ঘটনা ঘটল কেন? চৈতালিদেবী বলেন, “সব জায়গা থেকে রিপোর্ট আসুক। তা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ছাত্রছাত্রীরা যাতে কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেটা মাথায় রেখেই।”
স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন বলেন, “এই ধরনের ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। সম্ভবত দু’ধরনের পরীক্ষার্থীকে একসঙ্গে বসানোয় এই ভুল হয়েছে। পর্ষদকে বলা হয়েছে, পরের দিন থেকে দু’ধরনের পরীক্ষার্থী যাতে মিশে না-যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।” |