টাউন হল নিয়ে প্রশাসনের চাপান উতোরে হতাশ গোবরডাঙার মানুষ
ত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নাট্যচর্চায় এখানকার একটি পৃথক পরিচিতি রয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার উপযুক্ত একটি মঞ্চ বা কেন্দ্র তৈরির জন্য এখানকার মানুষের দাবি দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের কাছে বার বার দাবি জানিয়েও তা না পাওয়ায় এখানকার মানুষ হতাশ। যদিও গোবরডাঙা পুরসভার পক্ষ থেকে স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবরডাঙায় একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি নিয়ে স্থানীয় মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে আগে টাউনহল নামে একটি মঞ্চ ছিল। নানা সময়ে সেখানেই সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় ২০১০ সালে পুর নির্বাচনের আগে। একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির উদ্দেশ্যেই জীর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানায় তদানীন্তন বামশাসিত পুরবোর্ড। পুরসভার তরফে নতুন পূণার্ঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির আশ্বাসে খুশি হয়েছিলেন গোবরডাঙার মানুষ। কিন্তু ওই বছরেই পুর নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। সঙ্গে সঙ্গে পূণার্ঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু টাউন হল নির্মাণের কাজ থমকে রয়েছে।
টাউন হল যে অবস্থায়।--নিজস্ব চিত্র।
পুরবোর্ডে ক্ষমতা বদলের পরে টাউন হলের নিমার্ণ প্রসঙ্গে পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়কে দিয়ে আমরা টাউন হলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু মুকুলবাবুর সময়ের অভাবে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে মার্চ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।” পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ টাউন হল তৈরির জন্য আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ শুরুর জন্য পুরসভার হাতে ৮০ লক্ষ টাকা রয়েছে। সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর সাংসদ তহবিল থেকে ২৫ লক্ষ টাকা, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ২৫ লক্ষ টাকা এবং মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ১০ লক্ষ টাকা তাঁদের বিধায়ক তহবিল থেকে দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে এ জন্য আর্থিক সাহায্য বাবদ পুরসভার তহবিলে জমা পড়েছে ২০ লক্ষ টাকা। বাকি টাকার সংস্থানের প্রশ্নে পুরসভার দাবি, গোবিন্দবাবু এবং মঞ্জুলকৃষ্ণবাবু যথাক্রমে আরও ২৫ ও ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের কাছেও অর্থের আবেদন জানানো হয়েছে।
নতুন পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেও টাউন হল নির্মাণে দেরির ব্যাপারে পুরপ্রধান বলেন, “আগের বাম পুরবোর্ড নতুন করে টাউন হল নির্মাণের জন্য অর্থের ব্যবস্থা না করেই নির্বাচনী চমক দিতে পুরনো টাউন হল ভেঙে দেয়। ওই পুরবোর্ডে মিউনিসিপ্যাল ফান্ড ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৭. ৭৫ শতাশ সুদে। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ওই টাকার সঙ্গে সুদের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা শোধ করেছি। কারণ ওই টাকায় টাউন হল নির্মাণ সম্ভব ছিল না।” পুরপ্রধানের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি আগের বাম পুরবোর্ডের প্রধান বাপী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে একটি সংস্থার কাছ থেকে টাউন হল নির্মাণের জন্য এক কোটি টাকার ব্যবস্থা হয়। তার প্রথম কিস্তি হিসাবে ২৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে কাজও শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে টাউন হলের নির্মাণকাজ ওরা শুরু করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা বর্তমান পুরবোর্ডেরই।”
গোবরডাঙার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ অবশ্য প্রশাসনের এই চাপানউতোর শুনতে রাজি নন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রশাসন সত্যিই উদ্যোগী হলে অনেক আগেই টাউন হল তৈরি হয়ে যেত। এ ব্যাপারে গোবরডাঙার মানুষও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই স্কুলের ছেলেমেয়েদের সংস্কৃতি চর্চায় আরও উৎসাহ দিতে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অসীম মুখোপাধ্যায় নিজের স্কুলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি মঞ্চ বানিয়ে দিয়েছেন।
টাউন হলের নির্মাণ নিয়ে শিল্পায়ন নাট্যসংস্থার কর্ণধার আশিস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমরা আশাবাদী টাউন হলের দ্রুত নির্মাণে পুরপ্রশাসন উদ্যোগী হবে।” নকশা নাট্য সংস্থার কর্ণধার আশিস দাস বলেন, “পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন ১ জানুয়ারি কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখনও তা না হওয়ায় আমরা হতাশ।” রূপান্তর নাট্য সংস্থার তরফে প্রদীপ রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা শুনেছি মন্ত্রী সময় দিতে পারছেন না বলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ওই মন্ত্রী অর্থ সাহায্য করবেন বলেও শুনেছি।” তবে টাউন হল নির্মাণে গোবরডাঙার সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা যে প্রয়োজনে প্রশাসনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.