|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
যৌনতা আছে সেটা রুচিশীল |
তাঁর নতুন ছবি ‘চারুলতা ২০১১’-য় তিনি নাকি অসম্ভব সাহসী। ‘ছত্রাক’-এর
পাওলিকে
এটাই জবাব? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আগল ভাঙা। সামনে ইন্দ্রনীল রায় |
পত্রিকা: চেন্নাইতে বড় চমক তো? টালিগঞ্জের সবথেকে বড় দু’জন তারকাই চেন্নাইয়ে শু্যট করছেন।
ঋতুপর্ণা: একজন তো আমি...অন্য আর কে শু্যটিং করছে?
পত্রিকা: কেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়?
ঋতুপর্ণা: (হেসে) ওহ তাই? ভাল। আমি জানতাম না।
পত্রিকা: তা চেন্নাইতে কীসের শু্যটিং করছেন?
ঋতুপর্ণা: আমায় ‘হরলিকস গোল্ড’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। ওদের একটা বিজ্ঞাপনের শু্যট করছি এখানে। বিজ্ঞাপন সংস্থা জেডব্লুউটি থেকে আমায় অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল। ওরা নাকি একটা সার্ভে করেছে যেখানে আমার নামটা একেবারে প্রথমে এসেছে। এটা একটা বিরাট ক্যাম্পেন। |
|
পত্রিকা: আর কলকাতায় তো ‘চারুলতা ২০১১’ নিয়ে সাংঘাতিক ক্যাম্পেন। হোর্ডিং। খবরের কাগজ। সব জায়গায় আপনার খোলামেলা ছবি।
ঋতুপর্ণা: হোর্ডিংয়ে তো কোনও খোলামেলা ছবি নেই।
পত্রিকা: হোর্ডিংয়ে নেই। কিন্তু খবরের কাগজগুলোতে তো আছে। কেরিয়ারের এই সময়ে এত এক্সপোজারের কি সত্যি কোনও প্রয়োজন ছিল? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মধ্যে কি একটা ডেসপারেশন কাজ করছে?
ঋতুপর্ণা: ডেসপারেশন? কীসের ডেসপারেশন? আমি আপনার সঙ্গে একেবারেই একমত নই। ডেসপারেট বলে এক্সপোজ করেছি এ রকম মোটেও না। ‘চারুলতা ২০১১’-র চরিত্রটাকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছি তার মধ্যে লাস্য এবং যৌনতা আছে ঠিকই কিন্তু সেটা আছে অত্যন্ত রুচিশীলভাবে। একজন মহিলার ভেতরে লুকিয়ে থাকা যৌনতাকে তুলে ধরেছি আমি। নারীত্বকে আমি অনেক বড় ক্যানভাসে মেলে ধরেছি বলতে পারেন। এবং সেটা করেছি অত্যন্ত শিল্পসম্মতভাবে।
পত্রিকা: লোকে কিন্তু বলছে এই চরিত্রটায় আপনি এতটা খোলামেলা আসলে পাওলি দামকে দেখানোর জন্য...
ঋতুপর্ণা: কী? পাওলি দাম? ওকে তো আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বলেও মনে করি না তা ওকে আবার কী দেখাতে যাব? ও মিষ্টি মেয়ে। ভাল কাজটাজও করছে। কিন্তু পাওলি দাম কে বলুন তো?
পত্রিকা: মানে বলতে চাইছেন...
ঋতুপর্ণা: এ ভাবে আমাকে পাওলির সঙ্গে তুলনা যদি মিডিয়া করে তা হলে বলব মিডিয়া নিজেই খুব ভুল করছে। পাওলি সম্পর্কে আমার আসলে কিছু বলাই উচিত না। মিডিয়া তো দেখছি খুঁচিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে!
পত্রিকা: কিন্তু ‘ছত্রাক’-এর পরে অবস্থাটা পাল্টে গেছে তো। মানে কোনও নায়িকা যতই এক্সপোজ করুন না কেন বেঞ্চমার্ক সেই ‘ছত্রাক’এর পাওলি...সে আপনার ভাল লাগুক আর না লাগুক।
ঋতুপর্ণা: দেখুন আমি ‘ছত্রাক’ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। আমার পাওলি দামের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। কিন্তু আমি মনে করি ও ‘ছত্রাক’-য়ে যেটা করেছে সেটা এক কথায় ‘অবনক্সাস’। আমি যে এটা বললাম সেটা আপনি নির্দ্বিধায় কোট করতে পারেন। ও যা করেছে, লোকে ডিটেস্ট করেছে। আর সত্যি কথা বলতে কী, পাওলির ‘ছত্রাক’ দিয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কোনও লাভ হয়নি।
আর তা ছাড়া আমার ছবির পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত শিক্ষিত, পরিশীলিত একজন মানুষ। প্রযোজকরাও অত্যন্ত ভাল ব্যাকগ্রাউন্ডের। ওঁরা কোনও দিন ‘ছত্রাক’-এর মতো ছবি বানাবেন না। ‘চারুলতা ২০১১’র একটা মননশীল ছবি। তার সঙ্গে প্লিজ ‘ছত্রাক’-এর কোনও তুলনা টানবেন না।
পত্রিকা: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মানেই তো সৌন্দর্য আর বুদ্ধির ঝকঝকে মিশেল। সেই জন্যই কি ‘চারুলতা ২০১১’র মতো চরিত্র বাছছেন?
ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ। আমার দর্শক সব সময়ই আমার কাছ থেকে স্পেকটাকুলার কিছু আশা করেন। তাঁরা জানেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত প্রত্যেকটা চরিত্র আলাদা ভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখেন। আর আজকে আমি যে সব রোল বাছি, সেগুলোর মধ্যে গল্প আর চরিত্রের নানা দিক নতুন করে আবিষ্কার করার জায়গা থাকে। তা সে অগ্নিদেবের ‘চারুলতা ২০১১’-ই হোক বা শিবপ্রসাদের ‘মুক্তধারা’।
পত্রিকা: কিন্তু অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের তো এটা প্রথম ছবি। একেবারে আনকোড়া পরিচালকের ছবিতে এত সাহসী রোল...
ঋতুপর্ণা: অগ্নি কিন্তু এর আগে টেলিভিশনে খুব ভাল কাজ করেছে। আর আপনার লজিক অনুযায়ী তো নতুন কাউকে কোনও দিন সুযোগই দেওয়া উচিত না। অগ্নি এখনকার সবথেকে ঝকঝকে পরিচালকদের একজন আর ‘চারুলতা..’ ওর প্রতিভা প্রমাণ করে দেবে।
পত্রিকা: কিন্তু চারুলতা চরিত্রটা তো বাঙালির খুব কাছের। সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ ক্ল্যাসিক। সেখানে এ রকম একটা চরিত্রে কাজ করে বড় রিস্ক নিয়ে ফেললেন না? ঋতুপর্ণা: প্রথমত, এটা আমি একদম পরিষ্কার করে দিতে চাই যে এই ‘চারুলতা’ আগেরটার রিমেক নয়। এটা একটা সম্পূর্ণ নতুন ছবি।
পত্রিকা: তা হলে ‘চারুলতা’ নামটা কেন? গিমিক?
ঋতুপর্ণা: দেখুন আজকালকার দিনে সব ছবির জন্য একটা এক্স-ফ্যাক্টর তৈরি করাটা খুব দরকারি। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ যেমন সিল্ক স্মিতার নামটা ব্যবহারকরল। শুধু ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ কেন? ‘ডন ২’, ‘অগ্নিপথ’ যেখানে যা হচ্ছে সবই তো চমকের জন্য। সে ক্ষেত্রে, হ্যাঁ, ‘চারুলতা ২০১১’ নামটা অবশ্যই একটা গিমিক, দর্শক টানার জন্য।
পত্রিকা: সাধারণ মানুষের ধারণা ছবিটা চললে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ফায়দা হবে। কিন্তু যদি না চলে
তা হলে দায়টা হবে আপনার।
পুরো দোষটা এসে পড়বে আপনার ওপর। এ রকম একটা চান্স নিতে গেলেন কেন?
ঋতুপর্ণা: ছবি চলবে কি না সেটা দর্শকের ওপর নির্ভর করবে। সেই রায়টার জন্য তো অপেক্ষা করতেই হবে। তা ছাড়া আমি দেওয়ায় বিশ্বাস করি। তাতে কতটা লাভ হল, বা কতটা হল না সেটার হিসেব আমি করি না। সারা জীবন আমার সহ-অভিনেতা, প্রযোজকদের সব রকমভাবে সাহায্য করে এসেছি। এত বছর কাজ করার পর এটা বুঝেছি, ফিল্ম তৈরি একটা টিম-ওয়ার্ক। ছবির প্রচারেও তাই সাহায্য করেছি যতটা পেরেছি। মনে করে দেখুন ‘অনুরণন’এর সময় শিমারুর কাছে ছবি বিক্রি করতে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীকে আমিই সাহায্য করেছিলাম। অর্থাৎ আমি আমার ছবির ক্ষেত্রে আমার সবটুকু দিয়ে কাজ করায় বিশ্বাস করি। হতে পারে আমি খুব ইমোশনাল একটা মানুষ বলে এ সব করি।
পত্রিকা: খারাপ লাগে না যে বহু দিন হয়ে গেল কোনও বড় হিরোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান না? দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় আর অর্জুন চক্রবর্তী তো আর যাই হোক টপ হিরোদের মধ্যে পড়েন না?
ঋতুপর্ণা: খুব শিগগির আমাকে বড় হিরোদের বিপরীতে দেখতে পাবেন। তা ছাড়া আমি তো জিৎ আর ইন্দ্রনীলের (সেনগুপ্ত) সঙ্গে ছবি করেছি। কাজ করা হয়নি একমাত্র দেবের সঙ্গে। তবে আমার সঙ্গে ওঁদের সবারই খুব ভাল সম্পর্ক। এঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কাজ করতে পারলে ভাল লাগবে।
আর তা ছাড়া বড় হিরোরা ভাল কী কাজটা করছেন বলুন তো? সেই তো এক গাছের পেছনে গান গাওয়া আর হাত-পা ভেঙে মারামারি করা! আমার তো মনে হয় মুম্বইয়ের মতো আমাদের এখানকার নায়কদেরও ‘তারে জমিন পর’ বা ‘চক দে ইন্ডিয়ার’ মতো ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করা উচিত। হয়তো ভবিষ্যতে ওঁরা তাই করবেন।
পত্রিকা: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু গাছের পেছনে গান বা হাত পা ভাঙা মারামারি থেকে দূরে চলে গেছেন...
ঋতুপর্ণা: ওঁর ব্যাপারটা আমি ঠিক জানি না। আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক দিন কাজ করি না।
পত্রিকা: ‘২২শে শ্রাবণ’ দেখেছেন?
ঋতুপর্ণা: না দেখিনি।
পত্রিকা: শুনে অবাক লাগল। কেননা প্রসেনজিৎ কিন্তু ঠিক সময় করে আপনার ‘ইচ্ছে’ দেখেছিলেন...
ঋতুপর্ণা: ‘ইচ্ছে’ খুব ইউনিক একটা ছবিও তো ছিল। নতুন পরিচালক। কোনও স্টারকাস্ট নেই। এদিকে অসাধারণ কনসেপ্ট। মা আর ছেলের ও রকম একটা টানাপোড়েন...
পত্রিকা: মানে বলতে চাইছেন, ‘২২শে শ্রাবণ’ ইউনিক ছিল না?
ঋতুপর্ণা: কত জন স্টার বলুন তো ‘২২শে শ্রাবণ’-এ? আমি শুনেছি ইট ইজ আ গ্রেট ফিল্ম। কিন্তু ‘ইচ্ছে’ তো বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পার্থক্য তৈরি করেছিল। একটা মাইলস্টোন। সে দিক থেকে ‘২২শে শ্রাবণ’-এর থেকে ‘ইচ্ছে’ বেশি ইউনিক তো বটেই। |
|
|
|
|
|