|
মনোরঞ্জন... |
|
প্রত্যাবর্তন |
পরিবেশ, সংঘর্ষ, প্রত্যাবর্তন। পরিচালক গৌতম ঘোষ-এরও। লিখছেন বিশেষ সংবাদদাতা |
গৌতম ঘোষ চিত্রপরিচালক হিসেবে প্রত্যাবর্তন করছেন। দু’বছর বাদে। ‘মনের মানুষ’। তার পরে এই।
কঙ্কনা সেন শর্মার নায়িকার ভূমিকায় প্রত্যাবর্তন ঘটছে। দেড় বছর বাদে। ‘ইতি মৃণালিনী’। তার পরে এই।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তন ঘটছে হুইল চেয়ারে। প্রৌঢ় বিজ্ঞানীর ভূমিকায়। পুরনো ‘হুইল চেয়ার’-য়ে তাঁর পেশা ছিল ডাক্তারি।
ললিতা চট্টোপাধ্যায় অভিনেত্রী হিসেবে প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছেন। কত বছর বাদে কারও মনে নেই।
তা হলে কি গৌতম ঘোষ পরিচালিত নতুন ছবির থিমও ‘প্রত্যাবর্তন’?
কোথাও গিয়ে হয়তো মনে হবে তাই। গৌতমের নতুন ছবি দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বিপরীতধর্মী স্রোতের ত্র্যহস্পর্শে। আর সেই স্রোতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সেই অবিস্মরণীয় লাইনমানুষকে ধ্বংসই করা যায় হারানো যায় না। |
|
রোম থেকে মুম্বইয়ের একটা লম্বা ফ্লাইটে হেমিংওয়ের মৃত্যু সম্পর্কিত ধোঁয়াশা নিয়ে একটা লেখা পড়ছিলেন গৌতম। শেষ জীবনে এফবিআই কী ভাবে তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছিল। আরও কী কী যন্ত্রণাবিদ্ধ হতে থাকেন হেমিংওয়ে। তখনই গৌতমের মনে পড়ে যায় ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’। আকাশপথে অলক্ষ্যে তৈরি হয়ে যায় নতুন ছবির বীজ। কয়েক মাস বাদে যে ছবির নামকরণ করা হবে ‘শূণ্য অঙ্ক’। যার চিত্রনাট্য মিলিতভাবে লিখবেন গৌতম ঘোষ আর সমরেশ মজুমদার। যার শু্যটিং শুরু করে দেওয়া হবে মার্চে।
আলেকজান্ডার পুসকিনের একটা কবিতার লাইনও ঘুরঘুর করছিল পরিচালকের মাথায়। ‘এভরিথিং ইজ অ্যা স্যাক্রিফাইস টু ইয়োর মেমরি’। একই সময়ে তিনি কাগজে পড়ছিলেন কাশ্মীরে কভারেজে গিয়ে বেশ কিছু সাংবাদিকের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথা। পড়ছিলেন মাওবাদী সীমান্তে গিয়ে মিডিয়ার নানা রকম বিড়ম্বনার কথা।
এই সব ভাবনার উদ্ভাবিত পাসওয়ার্ডনতুন ছবিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ভূমিকায় কঙ্কনা সেন শর্মা। যে চাকরিতে যোগ দিয়েছে বিনোদন জগতের সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু বছর দুয়েক গ্ল্যামার কভার করে ক্লান্ত যার মনে হতে থাকবে আসল জীবনে আমার উন্মেষ প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকে সে ছুটে যাবে বিপদসঙ্কুল সব কভারেজে। হালফিল হিন্দি সিনেমার এই রকম মহিলা সাংবাদিকের প্রোটোটাইপ একজনই। বরখা দত্ত। কঙ্কনা কি তেমনই?
“একেবারেই না। কঙ্কনার চরিত্রটা ভীষণ বাঙালি এবং সংবেদনশীল। উগ্র সাহসী নয়। নির্ভীক।” বললেন গৌতম ঘোষ। তাঁর পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে বসে।
রোজ ভ্যালি ফিল্মস প্রযোজিত তাঁর নতুন ছবিতে প্রত্যাবর্তনের ছায়াপথে একটাই অভিষেক-রেখা। প্রণতি মজুমদার। কিংফিশারের প্রাক্তন এই বিমানসেবিকাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নিয়েছেন গৌতম। প্রতিষ্ঠিত নায়িকাদের না নিয়ে হঠাৎ আনকোরা কাউকে কেন? গৌতম বলছেন, “এই চরিত্রটাও এক সময় বিমানসেবিকা ছিল। প্রণতির বডি ল্যাঙ্গোয়েজে এমন একটা সহজাত স্মার্টনেস আর কমফর্ট রয়েছে যে সেটা আমাকে আর খেটে তৈরি করতে হবে না।” |
কঙ্কণা |
প্রণতি মজুমদার |
ললিতা চট্টোপাধ্যায় |
|
পরিচালক বলছেন, “লালনকে নিয়ে এমন একটা সময় ছবি করেছিলাম যখন ধর্মগত বিরোধে চারদিক আক্রান্ত। তখন মনে হয়েছিল এমন কারও কাহিনি যদি করা যায় যিনি সেই সময় লোকধর্ম থেকে সহিষ্ণুতার বাণী ছড়িয়ে ছিলেন। এই ছবিটাও সমকালীন ভাবনা থেকে তৈরি। চারদিকটা কেমন যেন অদৃশ্য, অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধে বিক্ষত। দেশটাও যেন উদ্বেগজনক ভাবে নানা ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সেদিন একটা রিপোর্ট দেখছিলাম দেশের ছ’ লাখ আধা সামরিক বাহিনী আছে কাশ্মীরে। দু’লাখ আছে উত্তর পূর্বাঞ্চলে। দু’লাখ আছে মাওবাদী এলাকায়। সমস্ত জগতের মানুষ তিনি বিজ্ঞানী হন, কী কর্পোরেট কর্তা, কী সাংবাদিক। এই গৃহযুদ্ধ আর পরিবেশগত বিরোধ আজকের দিনে কোথাও না কোথাও সবাইকে আক্রমণ করছে। আমার ছবি সেটাই ফুটিয়ে তুলবে।”
পরিবেশগত বিরোধ। সে বিরোধের আগুন। তার সঙ্গে সংঘর্ষ করে নিয়ত বেঁচে থাকাই বোঝা গেল এই ছবির উপপাদ্য। অর্থাৎ সমস্যাকে হারিয়ে বারবার জীবনে প্রত্যাবর্তন। হেমিংওয়ের সেই বৃদ্ধের মতো। |
|