|
|
|
|
|
|
|
খেলাধুলা... |
|
|
ধোনিবিদায়? |
০-৮ বিদেশে ভারতীয় টেস্ট টিমের সাম্প্রতিক স্কোর। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-র অধিনায়কত্বে।
এ বার কি টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে তাঁর অপসারণ দরকার? না কি ধোনি ছাড়া গতি নেই?
বিতর্কে নামলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পাঁচ জন শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট সাংবাদিক |
|
রায়
অধিনায়ক থাকা উচিত: ৩
অধিনায়কত্ব যাওয়া উচিত: ২ |
|
|
আয়াজ মেমন
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ
এবং কলামনিস্ট |
গৌরব কালরা
ক্রীড়া সম্পাদক
সিএনএন-আইবিএন |
ববিলি বিজয় কুমার
ক্রীড়া সম্পাদক,
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া |
|
|
সারদা উগরা
সিনিয়র এডিটর
ইএসপিএন-ক্রিকইনফো |
বোরিয়া মজুমদার
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ
টাইমস নাও |
|
ব্যর্থতার দায়িত্ব মেনে সরে যেতে হবে
সারদা উগরা
সিনিয়ার এডিটর, ক্রিকইনফো |
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ধোনিকে কি এবার সরানোর সময় এসেছে? ৮-০ ভরাডুবির পর এই প্রশ্নটাকে যদি কেউ পাগলামো বা অতি-প্রতিক্রিয়াশীল বলেন, তার একটাই মাত্র কারণ হতে পারে।
সেটা হল কেউই জানেন না যে নতুন অধিনায়ক হবেনটা কে। ধোনির পূর্বসূরীরা যদি বিদেশের মাটিতে এমন হারের রেকর্ড তৈরি করতেন, অধিনায়কত্বে বদলটাই হত প্রথম যুক্তিপূর্ণ পদক্ষেপ।
কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, অধিনায়ক নিয়ে এই সব নানা সমস্যা সত্ত্বেও, ভারতের আসল সঙ্কট বোধহয় এটাই যে নতুন প্রজন্মের এই দল দু’টো বিদেশ সফরেই ক্রিকেটীয় উৎকর্ষে অসম্ভব নিম্নমানের পরিচয় দিয়েছে। বিরাট কোহলিই একমাত্র ব্যতিক্রম। ধোনি নিজেও জানেন যে ভারতীয় টেস্ট দলে তাঁর টিকে যাওয়ার একটাই কারণ-- আর কোনও বিকল্প নেই।
এত কিছু সত্বেও ০-৮ ভরাডুবির পর টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ধোনিকে সরিয়ে দেওয়াই উচিত। টিমের ‘লিডারশিপ গ্রুপ’-কে নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের ফল ভুগতে হবেই। তাঁরাই তো ঠিক করেছেন কারা মাঠে থাকবেন, কারা নয়। স্ট্র্যাটেজি কী হবে। বিদেশের মাটিতে পরপর আটটা টেস্টে সেই সিদ্ধান্তগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সেরার চাকরির একটাই শর্ত-- দায়িত্ব পূরণ করো। নইলে পদ হারাবে।
ডানকান ফ্লেচারের ভাগ্য ভাল যে তিনি একটা কঠিন চাকরিতে নতুন এসেছেন। ধোনি টেস্ট অধিনায়কত্ব করছেন তিন বছর। সাফল্যও আছে তাঁর। কিন্তু শেষ আটটা টেস্টে হার এটা প্রমাণ করছে যে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে তাঁর অধিনায়কত্বে ঘাটতি আছে। ভারতীয় টেস্ট টিমের মধ্যে কিছু একটা পলকা হয়ে গেছে। অসম্ভব চাপের মুখে টিমটা ভেঙে পড়ছে। এই অসুখটা এক্ষুণি সারাতে হবে।
ধোনিকে এখনও অধিনায়ক রাখলে মনে হবে যেন এর কোনওটাই ঘটেনি।
ধোনিকে সরাতে নির্বাচকরা এখনও সময় নিতে পারেন, কারণ এশিয়ার বাইরে পরের সফরটার এখনও ১৮ মাস বাকি। অথবা তাঁরা এই সময়টাকে ব্যবহার করতে পারেন বীরেন্দ্র সহবাগ বা গৌতম গম্ভীরের মতো পোড়খাওয়া কাউকে অধিনায়কত্বে তালিম দেওয়ার জন্য। শর্ত একটাইঘরের মাঠে তাঁদের অধিনায়রত্বের স্থায়িত্ব নির্ভর করবে ব্যক্তিগত রান আর ফলাফলের ওপর। ধোনির টেস্ট অধিনায়কত্ব একটা সময় ভাল ছিল, কিন্তু অঙ্কটা বর্তমানে আর মিলছে না।
|
|
সময় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসছে
আয়াজ মেমন
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং কলামনিস্ট |
ছ’মাসের মধ্যে দু’টো সিরিজে হোয়াইটওয়াশের ধাক্কা বেশিরভাগ টেস্ট অধিনায়কই কাটিয়ে উঠতে পারেন না। কিন্তু আমার মনে হয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজের চাকরিটা এখনও রাখতে পারেন। চার বছরে তাঁর রেকর্ড কিন্তু উজ্জ্বল। তা ছাড়া বিকল্পই বা কোথায়?
অস্ট্রেলিয়ায় ০-৪ হারের পর ভারতীয় দল আর বিশেষ করে ধোনির বিরুদ্ধে একটা হইচই শুরু হয়েছে। কিন্তু এই হার, আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারদু’টোকেই সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে হবে। অধিনায়ক তখনই ভাল, যখন তাঁর টিম দুর্দান্ত খেলছে। আর এই দলগত পারফরম্যান্সের ব্যাপারটাতেই ধোনি মার খেয়ে যাচ্ছেন।
ইংল্যান্ডে তাঁর সেরা বোলার জাহির খান প্রথম টেস্টের প্রথম সেশনেই মাঠ ছেড়েছিলেন। আর অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ব্যাটিং অদ্ভুতভাবে ফর্ম হারালো। দু’টো ঘটনাই ধোনিকে নিশ্চয়ই যথেষ্ঠ অবাক এবং আহত করেছে।
এটা ঘটনা যে আবেগ বা রেকর্ড বই ঘেঁটে অধিনায়ক নির্বাচন করা যায় না। তা সত্বেও, পরিপ্রেক্ষিতকে একেবারে ভুলে গেলে চলবে না। গত ৩৫ বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে এমন তুমুল ঘাত-প্রতিঘাত আসেনি। তাই বিচার করতে বসলে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের ভরাডুবির পাশে পাকিস্তানের কাছে গত মাসে ইংল্যান্ডের বিশ্রী পরাজয়কেও রাখতে হবে।
১৯৭৫ থেকে ২০০৮এই সময়টায় যেমন টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলোর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য ছিল, আজ তেমন আর নেই। পাঁচ-ছ’টা টেস্ট খেলিয়ে দেশ এখন একে অপরের সঙ্গে শ্রেষ্ঠত্বের তকমা পেতে লড়াই করছে। প্রত্যেকেরই দুর্দান্ত রেকর্ড আছে, যার বেশিরভাগই নিজের দেশের মাঠে।
আসলে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থতার জন্য যতটা না ধোনির অধিনায়কত্ব দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক দৌর্বল্য। দেশের মাঠের পিচ, টিম নির্বাচন, ক্রিকেটারদের ওপর খেলার চাপ এবং ক্রিকেটিয় উৎকর্ষের প্রশ্নে উদাসীনতাবিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট প্রতিষ্ঠানের দৌর্বল্য অনেক জায়গাতেই।
তা সত্বেও, এটা মানতেই হবে যে অধিনায়ক হিসেবে ধোনির সময় খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসছে। খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াবার রেসিপিটা বের করতে হবে তাঁকে।
|
সহবাগ হোন, কোহলি তাঁর ডেপুটি
বোরিয়া মজুমদার
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, টাইমস নাও |
ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের টানা আটটা টেস্ট হার আমি দেখেছি। আর তার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শরীরী ভাষার পরিবর্তন-- সিরিজের শুরুতে প্রত্যয়ী, প্রথম হারের পর রক্ষণশীল, এবং শেষের দিকে নেতিবাচক। টিম যত নেতিয়ে পড়েছে, ধোনির অধিনায়কত্বও তত নেতিয়েছে। তাঁর ব্যাটিং তাঁকে যত ডুবিয়েছে, ভারতকেও তত দিশাহীন দেখিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের পুনরুত্থানের জন্য ব্যাটসম্যান ধোনিকে ফিরে পেতে হবে। কাজের চাপে বিব্রত, কোনঠাসা অধিনায়ক নয়, এখন ভারতের দরকার সাত নম্বরে নেমে খেলার মোড় ঘোরাতে পারা ব্যাটসম্যান ধোনির।
একদিনের ম্যাচে অধিনায়ক ধোনির পারফরম্যান্স আর টেস্ট ম্যাচে সেই একই লোকের পারম্যান্সকে পাশাপাশি রাখলেই সব বিতর্কের অবসান হয়ে যাবে। ৫০-ওভারের ম্যাচে ধোনি এত ভাল কারণ উনি লড়াইটা করেন সামনে থেকে, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কখনওই হাতের বাইরে যেতে দেন না এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ রাখেন। অদ্ভুতভাবে তাঁর টেস্ট অধিনায়কত্বে এর কোনটাই দেখা যায় না।
ধোনি এত ভাল একজন ক্রিকেটার যে তাঁকে একেবারে খরচের খাতায় পাঠিয়ে দেওয়াটা নিখাদ বোকামি। কিন্তু টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি হয়তো ব্যাটসম্যান ধোনিকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারে। এবং সেটা টিমের স্বার্থের জন্য, ভারতীয় দলে সঠিক ব্যালেন্স ধরে রাখার জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।
কিন্তু এমন একটা আলোচনাও চলছে যে এই ভারতীয় টেস্ট দলে এমন কেউ নেই, যাঁকে বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে ভাবা যায়। এখানে একটা কথাই বলার-- চ্যাম্পিয়ন দল তারাই যারা উপায়ন্তর নেই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকে না। সক্রিয় পদক্ষেপ করে কিছু ঘটানোর জন্য। এবার এগিয়ে চলার সময় এসেছে।
|
থাকুন শর্তসাপেক্ষে
গৌরব কালরা
ক্রীড়া সম্পাদক, সিএনএন-আইবিএন |
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ধোনির সামনে এখন অনেকগুলো অস্বস্তিকর প্রশ্ন। সেগুলোর ঠিকঠাক জবাব দিতে পারলেই একমাত্র মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টেস্ট অধিনায়ক থাকা উচিত। যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে টেস্ট জেতার জন্য তাঁর স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক কী? একদিনের ক্রিকেটে ধোনি নিজের পছন্দমতো টিম তৈরি করেন। অথচ টেস্টের ক্ষেত্রে অধিনায়ক হিসেবে প্রায় দ্বিরুক্তি না করে যে টিম তাঁকে নির্বাচকরা দেন, সেটাই মেনে নেন। এটা কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা আর মেনে নিতে পারছেন না। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ভরাডুবির পর এই ভাঙা দলকে যদি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাতে পারেন, তবেই ধোনি অধিনায়ক থাকার যোগ্য। গা-বাঁচানো ‘ক্রিকেটে এমন হয়েই থাকে’ জাতীয় মন্তব্যে আর চিঁড়ে ভিজবে না। বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে গেলে কোন পথে এগোতে হবেএই প্রশ্নের একটা পরিষ্কার জবাব এবার চাই। অপ্রিয় এবং কর্কশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সময় এসেছে।
নিজের টেস্ট কেরিয়ার নিয়েই বা ধোনি কী ভাবছেন, এই প্রশ্নটারও একটা পরিষ্কার উত্তর পাওয়ার সময় এসেছে। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের উচিত ধোনির সঙ্গে এ বিষয়টা খোলাখুলি আলোচনা করা। বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলার সময় নিজের ব্যটিংয়ের ওপরই ধোনির বিশ্বাস থাকে না। ঝোড়ো স্পেলের সামনে ব্যাট হাতে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর সাহসটাই তিনি দেখাতে পারেন না। একদিনের ক্রিকেটে যে কোনও অবস্থা সামলানোর একটা সহজাত প্রতিভা যে লোকটার আছে, সে টেস্টে এত সহজে হার মেনে নেয় কেন? টেস্ট-ব্যাটসম্যান হিসেবে কি ধোনি ব্যর্থ হবার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন? আর সেটা যদি হয়, তা হলে দ্রাবিড়, সচিন, লক্ষ্মণের প্রস্থানের পরও কি এই মনোভাব নিয়ে ধোনির বিদেশে টেস্ট খেলতে যাওয়া উচিত? ধোনির সামনে এখন এটাও চ্যালেঞ্জ। নিজেকে এবং ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বাস করানো যে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেও তাঁর অনেক কিছু দেওয়ার আছে। এবং তার জন্য যা দরকার, সেটা তিনি দেবেন।
আর সবশেষে যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার দরকার, তা হল টেস্ট ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধোনি দেখেন কি না। তাঁর অধিনয়কত্বে একদিনের ক্রিকেটে ভারতের সাফল্য অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু বিদেশের মাটিতে টেস্টে এমন হেনস্থা হতে থাকলে ভারতকে বিশ্ব ক্রিকেটের শক্তিপুঞ্জ হিসেবে কেউ মানবে না। ক্রিকেট-রসিকরা একটা দলকে তখনই কৌলিন্যের তকমা পরান, যখন তারা বিদেশের মাটিতে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টেস্ট জিতে ফেরে। ধোনি যদি এতে বিশ্বাস না করেন, তা হলে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সরে যাওয়া উচিত। ভক্তদের কাছে ভারতীয় ক্রিকেটের একটাই দেনা একটা শক্তিশালি টেস্ট দল। সেই দলের অধিনায়ক যদি টেস্ট-ক্রিকেটের মহত্বে বিশ্বাসই না করেন, তা হলে তাঁকে সরিয়ে এমন কাউকে আনা উচিত যাঁর সেই বিশ্বাস আছে। একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া একটা শৃঙ্গজয় নিশ্চয়, কিন্তু বিদেশের মাটিতে অবিরত ভেঙে পরা একটা দল কোনওদিনই ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ রসিকদের সম্মান আদায় করতে পারবে না। মনের গভীরে সেই সম্মান হয়তো নিজেও নিজেকে দিতে পারবে না।
|
|
থাকবেন বিকল্প নেই বলে
ববিল্লি বিজয় কুমার
ক্রীড়া সম্পাদক, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অবস্থাটা ঠিক এখনকার ভারতীয় ক্রিকেটদলের মতো। ক্লান্ত। দিশাহীন। একটু বিশ্রাম পেতে পাগল। সুযোগ পেলে এ রকম একটা অবস্থায় ধোনি খেলা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতেন হয়তো। আর মাস ছয়েক কিংবা তারও পরে ফেরত আসার কথা ভাবতেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বড্ড প্রতিযোগিতা আমাদের আজকের এই দুনিয়ায়। আর একদম ওপরে যাঁরা, তাঁদের ফেরত যাওয়ার রাস্তা নেই এমন নয়। কিন্তু তারপর? ফিরে আসা যে আরও বড় চ্যালেঞ্জ! ধোনি এখন সে রকমই একটা অবস্থায়। যেখানে না পারলেও চালিয়ে যেতে হয়।
তা হলে নির্বাচক, বা তাঁদেরও মাথার ওপরে যাঁরা, তাঁদের এখন কী করা উচিত? টানা আটটা টেস্টে পরাজয়। সেখানে শুধু দলটা খুব খারাপ ছিল, ছেলেরা খারাপ খেলেছে বলে সব দোষ এড়িয়ে গেলে চলবে কেন? ধোনিকে তো ব্যাট হাতে যতটা নিরুৎসাহ দেখিয়েছে,অধিনায়ক হিসেবেও ততটাই। তা হলে?
ধোনি আসলে এই বার্তাটাই সব সময় দিয়ে এসেছেন যে একদিনের ম্যাচেই উনি বেশি স্বচ্ছন্দ। খেলোয়াড় হিসেবেও। অধিনায়ক হিসেবেও। যেখানে উনি কিছু বেসিক রুল মেনে চলেন। যেমন, ধৈর্য ধরে বিপক্ষকে ভুল করার সুযোগটা দেওয়া। আক্রমণেও ধোনি দারুণ ভুমিকা নিতে পারেন। যে ব্যাপারগুলো কম ওভারের খেলায় দারুণ কাজ দেয়।
আর টেস্ট ম্যাচে আপনাকে সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মকও হতে হবে। সারাক্ষণ এগিয়ে খেলতে হবে। অধিনায়ককে তাঁর প্লেয়ারদের ধাক্কা মারতে হবে। এই ভেবে অপেক্ষা করা চলবে না যে ওরা ওদের সেরাটা নিজেরাই বের করে আনতে পারবে। যে ব্যাপারটা ধোনি একদমই পারেন না। আমার তো মনে হয় ওঁর একটা ব্রেক নেওয়া খুব দরকার। বিশেষত টেস্টে।
ধোনির ভাগ্য ভাল যে অন্য যাদের ওঁর জায়গায় ভাবা হচ্ছে তাঁদের পারফরম্যান্সও বাজে। সমালোচনার তিরে তাঁরাও বিদ্ধ। সহবাগকে তো দেখে মনে হচ্ছে ওঁর আগের ফর্মের হাল্কা ছায়া মাত্র। ব্যাটিংয়ে সেই জ্যোতিটাই আর নেই সহবাগের।
গম্ভীরকে হঠাৎই শর্ট এবং ফাস্ট বলের সামনে নড়বড়ে দেখাচ্ছে। টেস্ট দলে খেলোয়াড় হিসেবে টিকে থাকাই ওঁর পক্ষে বেশ মুশকিল এখন। কোহলি মোটামুটি ভাল খেলেছেন ঠিকই তবে ধোনির জায়গায় ওঁকে ভাবাটা বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করা হয়ে যাবে। এত বড় দায়িত্ব নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতাই ওঁর হয়নি। মোদ্দা কথা হল, ধোনির জায়গা নিতে পারে এখনকার ভারতীয় দলে এমন কাউকে চোখেই পড়ছে না।
আর তাই, ধোনি যিনি কিনা মোটেও এই অবস্থায় ভারতীয় টেস্ট দলের জন্য অধিনায়কের পদে সেরা পছন্দ নন, তিনি থেকে যাবেন শুধুমাত্র তাঁর আর কোনও বিকল্প নেই বলেই।
|
ছবি: উৎপল সরকার |
|
|
|
|
|