|
|
|
|
‘বেআইনি’ বাগদা-চাষে জমির ক্ষতি, উদ্বেগ পূর্বে |
সুব্রত গুহ • কাঁথি |
সরকারি বিধিনিষেধ মেনে কৃষিজমির চরিত্র বদল না করেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ব্যাপক হারে কৃষি-জমিতেই নোনা জলের বাগদা চাষ হচ্ছে। এর ফলে এক দিকে যেমন দূষণ ঘটছে তেমনই নোনা জলে কৃষিজমির ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ। জমির চরিত্র বদল না করা এবং মৎস্য দফতরেরও লাইসেন্স না নিয়ে এ হেন বাগদা চাষ চলতে থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য সহ-মৎস্য অধিকর্তা (নোনাজল) পিনাকীরঞ্জন দে সম্প্রতি জেলাশাসকের কাছে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছেন।
জমির চরিত্র বদল না করেই কৃষিজমিতে বাগদা চাষ বিষয়ে সরকারি যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার বিরুদ্ধে জেলার কিছু সংখ্যক বাগদা-চাষি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারির নির্দেশে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও বাগদা চাষের আগে রাজ্য সরকারের ভূমি দফতর থেকে জমির চরিত্র বদল অনুমোদন করানো, মৎস্য দফতরের থেকে লাইসেন্স নেওয়া এবং বাগদা চাষের নির্ধারিত জমির সীমা লাগোয়া কৃষিজমির মালিকদের কাছ থেকেও অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর তমলুকে জেলাশাসকের দফতরে জেলাশাসকের পৌরোহিত্যে ‘কোস্টাল অ্যাকোয়া-কালচার অথরিটি’র জেলা পর্যায়ের এক বৈঠকও হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি), জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ, উপ-কৃষি অধিকর্তা, মৎস্য দফতরের উপ-অধিকর্তা, সহ-অধিকর্তা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু জেলায় বাগদা-চাষ বাণিজ্যিক ভাবেই করা হচ্ছে তাই রাজ্য সরকারের ভূমি দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি ডেসিমেল জমির খাজনা বাবদ ৫০ টাকা করে দিতে হবে। ভূমি দফতর থেকে আইনানুগভাবে জমির চরিত্র-বদল অনুমোদন করাতে হবে। মৎস্য দফতর থেকেও বাগদা চাষের অনুমোদন বা লাইসেন্স নিতে হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরকারি বিধিনিষেধ, হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করেই বেআইনি ভাবে যথেচ্ছ হারে বাগদা চাষ চলছেই। মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর (২০১০-২০১১) মাত্র ২৩১.৭৬৫ হেক্টর জমিতে বাগদা চাষের জন্য মৎস্য দফতরের লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল (৪৭০ জন অনুমতি পেয়েছিলেন)। এ বছর (২০১১-২০১২) আরও কম, মাত্র নিয়ে ৭০.৬৯২ হেক্টর জমিতে বাগদা চাষের জন্য লাইসেন্স নিয়েছেন নামমাত্র ১৬১ জন। লাইসেন্স ছাড়াই বাগদা-চাষের প্রবণতা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে।
বেআইনি ভাবে জেলায় বাগদা চাষের হিড়িক পড়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিকও। তাঁর কথায়, “এ নিয়ে জেলা জুড়ে একাধিক সচেতনতা শিবির করা হলেও বাস্তবে কাজে দেয়নি। জমির চরিত্র বদল না করে বাগদা চাষ কেউ করলে প্রাথমিক ভাবে ভূমি দফতরের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা-ও হয়নি।” জেলা প্রশাসন যাতে এ ব্যাপারে আরও সক্রিয় হয় সে জন্য জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন বুদ্ধদেববাবু। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) সুমিতা মিত্র দেবের অবশ্য দাবি, বেআইনি বাগদা-চাষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ভূমি দফতর। |
|
|
|
|
|