কিষেণজির মৃত্যুর জনশুনানি জনশূন্য |
কিংশুক গুপ্ত • গিধনি (জামবনি) |
মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজির মৃত্যু নিয়ে প্রশাসনিক তদন্তের জনশুনানিতে এলেন না কেউই।
শুক্রবার জামবনি ব্লক অফিসে জনশুনানি করতে যান বর্ধমানের ডিভিশনাল কমিশনার কাশীনাথ বেহেরা। তবে কেউ তাঁর কাছে জবানবন্দি দিতে আসেননি। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বিকেল ৩টে নাগাদ ফিরে যান তিনি। পরে কাশীনাথবাবু বলেন, “জনশুনানিতে কেউই আসেননি। এরপরে সরকারি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজির মৃত্যু নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে। শুক্রবার জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে
কিষেণজি-র মৃত্যুর ‘ঘটনাস্থল’ পরিদর্শন করেন বর্ধমানের ডিভিশনাল কমিশনার কাশীনাথ বেহেরা। |
গত ১৪ ফেব্রুয়ারিও মেদিনীপুর কালেক্টরেটের সভাঘরে কিষেণজির মৃত্যু নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত করতে গিয়েছিলেন ডিভিশনাল কমিশনার। সে দিনও পুলিশ-আধাসেনা বা এ ব্যাপারে আগ্রহী জনসাধারণের কেউই হাজির হননি। প্রশাসন পরে দাবি করে, সে বার ‘উপযুক্ত’ প্রচারের অভাব ছিল।
কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের (সিআইএফ) আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্ত অবশ্য এ দিন বলেন, “এ বার প্রচারে যথেষ্ট উদ্যোগী ছিল প্রশাসন। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি এলাকায় গাড়ি নিয়ে গিয়ে প্রচারও চালানো হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপিও সাঁটানো হয়। এমনকী অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরে কিষেণজির আত্মীয়স্বজনের কাছেও খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা-ও কেউ এলেন না।”
বস্তুত, এ ধরনের জনশুনানিতে জনতার অনুপস্থিতি নতুন ঘটনা নয়। গত বছর ১০ মার্চ জামবনিতে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতোর মৃত্যু হয়। তার পর জামবনি ব্লক অফিসে জনশুনানিতে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস। সেই শুনানিও কার্যত জনশূন্যই ছিল। |
|
পরে গিধনিতে জামবনি ব্লক অফিসে বিডিও-র ঘরে শুনানি করার জন্য বসেন কাশীনাথবাবু।
বিকেল ৩টে পর্যন্ত এক জনও না আসায় ফিরে যান তিনি। |
কিষেণজির মৃত্যুর পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছে কিষেণজিকে। তা হলে জনশুনানিতে কেউ এলেন না কেন? মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা কিষেণজির মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগের তদন্ত করছে প্রশাসন। এ ধরনের জনশুনানিতে আমরা আগ্রহী নই।” একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বক্তব্য, “আমরা মাওবাদীদের যেমন ভয় করি, তেমনই পুলিশের ভয়ও আছে। এ সব শুনানিতে যাওয়া মনেই ঝামেলায় জড়ানোর আশঙ্কা থাকে।” গত ২৪ নভেম্বর যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন কিষেণজি। ওই অভিযানে যোগ দেওয়া পুলিশ ও আধা-সেনার বক্তব্য গতকাল শুনেছিলেন ডিভিশনাল কমিশনার। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ প্রথমে জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে ‘ঘটনাস্থল’ পরিদর্শন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন সিআইএফের আইজি, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েল, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী, ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) অলক রাজোরিয়া।
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|