|
|
|
|
নাক গলাবে না, বার্তা রাজ্যের |
সুপ্রিম কোর্টে নন্দীগ্রাম মামলা প্রত্যাহার, খুলল তদন্তের পথ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুক্রবার নন্দীগ্রাম মামলা প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য সরকার। ফলে চার বছর আগে কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তাই মেনে নন্দীগ্রামে গুলিচালনায় ‘অভিযুক্ত’ পুলিশকর্মী ও অফিসারদের বিরুদ্ধে এ বার নিম্ন আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারবে সিবিআই। তদন্তও এগিয়ে নিয়েও যেতে পারবে তারা। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এই তদন্তে তারা ‘নাক গলাবে না’।
সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে অবশ্য রাজনৈতিক-প্রশাসনিক মহলে একটি আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার যদি শেষ পর্যন্ত ওই ঘটনায় ‘দোষী’ পুলিশকর্মী ও অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তা হলে ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা জনিত কোনও পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পুলিশ-প্রশাসন ‘শঙ্কিত’ হবে বলেই প্রশাসনিক মহলের একাংশের আশঙ্কা। রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য এখনও ওই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যাবতীয় ‘সম্ভাবনা’ই খোলা রাখা হয়েছে। রাজ্যের আইন ও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটক এ দিন বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমরা মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এ বার সিবিআই নিজের মতো করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। তদন্তের স্বার্থে যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। রাজ্য সরকার নাক গলাবে না।” তবে কোনও পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার প্রয়োজন হলে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সে ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মলয়বাবুর কথায় স্পষ্ট যে, এখনই এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনে ‘অহেতুক আশঙ্কা’ তৈরি করতে চাইছে না সরকার। তবে ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’, এমন বলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের ‘চাপমুক্ত’ও করতে চাইছে না।
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের গুলিচালনার ঘটনাকে ‘বেআইনি এবং অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ও অফিসারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার হাইকোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে। ফলে এত দিন নন্দীগ্রামের গুলিচালনার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী ও অফিসারদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেনি সিবিআই। শুক্রবার মমতার সরকার সুপ্রিম কোর্ট থেকে ওই মামলা তুলে নেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বলবৎ করতে আর কোনও বাধা থাকল না।
নতুন সরকারের এই পদক্ষেপ অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা জানিয়েছিলেন, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের তরফে দায়ের-করা মামলাটি তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রত্যাহার করতে চান। এ দিন তা-ই ঘটেছে। যার অর্থ, নন্দীগ্রামের গুলিচালনার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তই বহাল থাকছে। এখন সিবিআই নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে নতুন করে ওই মামলার তদন্ত শুরু করতে পারবে। প্রয়োজনে সিবিআই সেই সময় বিভিন্ন এফআইআরে নাম-থাকা অভিযুক্তদের জেরা এবং দরকারে তাদের গ্রেফতারও করতে পারবে। জেরা করা যাবে সেইসময় ওই এলাকায় ‘কর্তব্যরত’ পুলিশ অফিসারদেরও। জেরা করা যাবে সম্পূর্ণ নতুন কাউকেও।
নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সময় তৎকালীন বিরোধীদল তৃণমূল যে সব পুলিশকর্তার নামে অভিযোগ তুলেছিল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল), ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ), পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এবং তিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-সহ আরও কয়েক জন পুলিশ অফিসার। নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। এমনকী, প্রাথমিক ভাবে রাজ্যপুলিশের তৎকালীন ডিজি-র নামও উঠে এসেছিল অভিযুক্তের তালিকায়। এখন সিবিআই ওই সব অফিসারকে দরকারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
তবে তৎকালীন ডিজি ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন। আর ঘটনাচক্রে, নতুন সরকারের আমলে সিবিআইয়ের প্রাথমিক তদন্তে ‘চিহ্নিত’ পুলিশ অফিসারদের একাংশ আপাতত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কর্মরত। প্রশাসনের একাংশ যে কারণে প্রশ্ন তুলেছে, ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে সিবিআই নিম্ন আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করলে পুলিশবাহিনীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কি না।
প্রসঙ্গত, এ দিনের ওই ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ দিন মুখ খুলতে চায়নি প্রধান বিরোধীদল এবং বিগত সরকারের বৃহত্তম শরিক সিপিএম। রাজ্য সরকার এর পরে কী পদক্ষেপ করে, সেই দিকেই তারা আপাতত নজর রাখছে। দলের রাজ্য
সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “আদালতের বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা উচিত হবে না। কিন্তু মাথায় রাখা উচিত, আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে পুলিশ অফিসারেরা দোষী সাব্যস্ত হলে পুলিশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে পারে। তখন পুলিশের কাজ করা মুশকিল হবে। তবে এখনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু ধরে নেওয়ার সময় আসেনি।” |
|
|
|
|
|