|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
জলসঙ্কট |
আশঙ্কার প্রহর গোনা |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
জলসঙ্কটে ভুগছে কামারহাটি পুর এলাকা। শীত শেষ হতে না হতেই এই জলসঙ্কট যেমন তীব্র আকার ধারণ করছে, তাতে গ্রীষ্মে জলের জন্য হাহাকার পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভূগর্ভের জলস্তর নীচে নেমে যাওয়াতেই মূলত এই সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন পুরসভার শাসক ও বিরোধী দল। তবে এই সমস্যা সমাধানে পুরসভা কোনও পরিকল্পনা নেয়নি বলে অভিযোগ কামারহাটি পুরসভার বিরোধী দল তৃণমূলের।
বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে এই জলসঙ্কট। কিন্তু পুরসভার তরফে কোনও রকম ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুরসভা সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে চলায় পানীয় জলের পাম্পগুলি প্রায় অকেজো হতে চলেছে। কোনও পাম্পে বিপুল পরিমাণে লোহা থাকায় সেটির জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আবার কোনওটির জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় ওই পাম্প থেকে পর্যাপ্ত জল মিলছে না। এ ছাড়া, অধিকাংশ পাম্পের জলের সঙ্গে বালি উঠে জল সরবরাহ ব্যবস্থাই প্রায় বিকল করে দিচ্ছে। পাশাপাশি, অপরিকল্পিত ভাবে বসানোর ফলে সব পাইপ লাইনে সমান ভাবে জল সরবরাহ হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। |
|
স্থানীয় সূত্রে খবর, পুরসভার ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে চটকল কর্মীদের বাসস্থান থাকায় সেখানকার বাসিন্দারা চটকলে সরবরাহ করা জল পান। না হলে পানীয় জলের অভাবে ওই ৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও শোচনীয় অবস্থা হত। পুরসভার ৮, ৯, ১০, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অবশ্য ইতিমধ্যেই তীব্র জলসঙ্কটের শিকার। মাটির নীচের পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত জলের চাপ এতই কম যে তার থেকে পানীয় জলটুকু পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। গৃহস্থালীর কাজের জন্য জলের জোগাড়টুকু করতে জেরবার হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এলাকায় যে রকম জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রয়েছে তাতে জল পেতে হলে প্রতি বাসিন্দাকেই মাটির নীচে জলাধার তৈরি করতে হবে। কিন্তু সকল নাগরিকের পক্ষে তা তৈরি করে অন্য পাম্পের মাধ্যমে ছাদের জলাধারে জল তোলা সম্ভব নয়। ফলে বহু বাসিন্দাকেই মাটি খুঁড়ে নিজের প্রয়োজনীয় জলটুকু মাটির নীচের পাইপ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সেখানে জলের যে চাপ থাকে তাতে মাটির উপরের ট্যাপে ওই জল পাওয়া যায় না। কামারহাটির বাসিন্দা নীলাদ্রি রায় বললেন, “পানীয় জলের পাইপ লাইনে জলের সামান্য চাপ থাকে। তাই অনেক সময় কলের মুখে মুখ লাগিয়ে
জল টানার চেষ্টা করতে হয়। পুরসভার পানীয় জলসঙ্কটে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই।”
কামারহাটি পুরসভা সূত্রে খবর, এলাকায় জল সরবরাহ করে পুরসভার ২৮টি সাব-মার্সিবল পাম্প। টালার জল পাওয়া যায় শুধু ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বরাহনগর-কামারহাটি যৌথ জল প্রকল্প, যে জলের সিংহ ভাগই যায় বরাহনগর পুর-এলাকায় আর বাকি জল যায় কামারহাটি ও উত্তর দমদম পুর-এলাকায়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডেরই জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের আর একটি প্রকল্প গঙ্গার জল পরিশোধিত করে সরবরাহ করে। এ ছাড়া গঙ্গার জল শোধন করে সরবরাহ করে ৩০ লক্ষ গ্যালন পানীয় জল উৎপাদনকারী কেএমডিএ-র একটি প্রকল্প। তবে এই প্রকল্প থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় কামারহাটি ছাড়াও বরাহনগর, উত্তর দমদম, পানিহাটি, খড়দহ ও টিটাগড় পুর এলাকাতেও। |
|
কামারহাটি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের স্বপন মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে একই জায়গায় পাম্প চলার ফলে জলস্তর নেমে গিয়ে বিপুল সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে পুরসভার কোনও পরিকল্পনা নেই। যার ফলে আগামী গ্রীষ্মে পানীয় জলের হাহাকার পড়ে যাবে আশঙ্কা করছি। সাংসদের সঙ্গে কথা বলে সুরাহার রাস্তা খুঁজব।”
কামারহাটি পুরসভার উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের প্রবীর মিত্র বললেন, “জলস্তর নেমে যাওয়ায় পুরসভার পাম্পগুলি পর্যাপ্ত জল তুলতে পারছে না। কেএমডিএ-র প্রকল্পটি থেকেও প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যায় না। তাই প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু ন্যূনতম ধার্য মাপের জলটুকুও দিতে পারা যাচ্ছে না। তবে ৪০ লক্ষ গ্যালনের অন্য একটি জল প্রকল্পের কাজ চলছে। সেটি সম্পূর্ণ হলে আশা করি জলসঙ্কট দূর হবে।”
|
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী |
|
|
|
|
|