|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
ট্রেন আসছে |
পার হয়ে যায় লোক... |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
দূর থেকে ট্রেন আসছে। বেশ জোরেই ট্রেনের চালক হুইস্ল বাজাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই। কার্যত হেলেদুলেই রেললাইন পার হচ্ছেন মানুষজন। দৃশ্যটি বাগবাজার মায়ের ঘাটে। প্রতি দিন সকাল ও সন্ধ্যা, দু’বেলাই বহু লোকের সমাগম হয় এই ঘাটে। ঘাটটি বাগবাজার স্টেশনের একদম গা ঘেঁষে। ফলে মায়ের ঘাটে আসার একমাত্র পথ রেললাইন পার করে আসা। অথচ, এখানে কোনও লেভেল ক্রসিং নেই।
কিন্তু শুধু লেভেল ক্রসিং থাকা বা না থাকার সমস্যা নয়। বাগবাজার থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত চক্ররেলের ধার বরাবর অনেক জায়গাতেই হয় রেলিং কাটা, না হয় দেওয়াল ভাঙা। অভিযোগ উঠেছে, সবটাই করা হয়েছে শুধুমাত্র সহজ উপায়ে লাইন পারাপারের জন্য। যেমন, বাগবাজার স্টেশনের পাশে একটি লেভেল ক্রসিং থাকলেও কিন্তু সেই লেভেল ক্রসিং খুব কম লোকই ব্যবহার করেন। এখানেও অনেক জায়গায় লাইনের পাশের রেলিং এবং দেওয়াল কাটা। সহজ উপায়ে রাস্তা পারাপারের জন্যই বিভিন্ন গলির পাশে রেলের দেওয়া রেলিং কাটা হয়েছে অথবা ভাঙা হয়েছে দেওয়াল।
|
|
স্থানীয় বস্তিবাসী বা লাইনের ধারে থাকা মানুষজন সহজ উপায়ে লাইন পার করার জন্যই এই দেওয়াল ভেঙে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কাটা রেলিং কিংবা ভাঙা রেলিং দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে লাইন পারাপার করেন সকলেই। বাগবাজারের বাসিন্দা সুবীর চক্রবর্তীর কথায়: “রোজই সন্ধ্যায় এখানে বহু বয়স্ক মানুষ আসেন। অনেক সময়ে ট্রেন চলে আসে। তারই সামনে দিয়ে লোকজন দৌড়ে পার হন। এই জায়গাটায় আবার লাইনটা বাঁক নেওয়ায় হুইস্ল ছাড়া বোঝার উপায় নেই যে ট্রেন আসছে। তবে ট্রেনের চালকেরা নিজেরাই এখানে জোরে হুইস্ল দেন সতর্ক করার জন্য। রেলের উচিত খুব তাড়াতাড়ি এই জায়গায় লেভেল ক্রসিং করে দেওয়া।”
যদিও বাগবাজারেই আর এক প্রবীণ বাসিন্দা সমীর ভট্টাচার্য বললেন, “আমার জন্মের আগে থেকে এ ভাবে লোকজন গলির ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। চক্ররেলের আগে থেকে এ ভাবে যাতায়াত করার ফলে পরবর্তীকালেও তার কোনও হেরফের হয়নি। গঙ্গায় স্নান করা কিংবা কাপড় কাচা, বিকেলের দিকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বহু আগে থেকেই মানুষ গলির মধ্য দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। মনে হয় না এই রাস্তাগুলি আর বন্ধ করা যাবে।”
একই অবস্থা বাগবাজার থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত লাইনের ধারের। ট্রেন আসছে হুইস্ল দিয়ে। কিন্তু তাতে কী এসে যায়? বাগবাজার থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত চক্ররেলের ধারে লেভেল ক্রসিংয়ের তোয়াক্কা না করেই কাটা রেলিং এবং ভাঙা দেওয়াল দিয়ে চলছে অবাধ লাইন পারাপার। বড়বাজারে আবার দেখা গেল, মালবাহকেরা জিনিসপত্র মাথায় নিয়ে ট্রেনের সামনে দিয়েই লাইন পারাপার করছেন। উত্তর কলকাতার চক্ররেলের ধার বরাবর প্রতিটি জায়গাতেই রয়েছে এ রকম নানা কাটা রেলিং আর ভাঙা দেওয়াল। |
|
ঘটনার কথা স্বীকার করে শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বিধায়ক শশী পাঁজা বলেন, “আমি নিজেও দেখেছি। ওই জায়গাগুলি সত্যিই বিপজ্জনক। কিন্তু আমি গঙ্গার সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করছি। ওই প্রকল্পে যদি রেলের অংশটুকুও ধরা থাকে, তা হলে যা কাজ তখনই হয়ে যাবে। না হলে আমি অবশ্যই রেলকে বলে ব্যবস্থা নেব। কারণ জায়গাটি রেলের। আর দু’টি জায়গায়, মায়ের ঘাটে আর নিমতলার একটি জায়গায় লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য রেলকে অনুরোধ করব।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামীর কথায়: “ব্যাপারটি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। এখনও পর্যন্ত কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটবে না এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। আমরাও খুব আশঙ্কায় থাকি।
অনেক বার ভাঙা পাঁচিল এবং রেলিং সারিয়ে দিলেও পরে আবার স্থানীয় কিছু মানুষ এগুলি ভেঙে দেন। এ ব্যাপারে মানুষের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে।” |
|
|
|
|
|