‘দাদি বলেছিল ওদের উপর চড়ে বসতে, চড়ে বসলাম’
বে নেমেছেন চার-পাঁচ ওভার। চারটে বল ‘মিস’ হল...উইকেটে থিতু হতে একটু সময় নিচ্ছেন। মাঝে ছোট্ট একটা ‘ড্রিংকস ব্রেক’। জলের বোতল, তোয়ালে হাতে মাঠে ঢুকে পড়লেন সঞ্জীব স্যান্যাল। সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গোপন বার্তা।
‘লক্ষ্মীকে বল ওদের উপর চড়ে বসতে।’
শুক্রবারের বিকেলের ইডেন গার্ডেন্স। সাংবাদিকদের ভিড়ভাট্টা আর নেই। কিন্তু হাতের মোবাইলটা ক্রমাগত বেজেই চলেছে। রাশি-রাশি শুভেচ্ছার ভিড়। উত্তর দিতে-দিতে লম্বা-চওড়া চেহারাটা গা এলিয়ে দিল ড্রেসিংরুমের লাগোয়া চেয়ারে। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু কোথাও যেন তৃপ্তি ছুঁয়ে থাকে লক্ষ্মীরতন শুক্লর শরীরে। আলতো হেসে আনন্দবাজারকে বলে ফেলেন, “দাদি বলেছিল, ওদের উপর চড়ে বসতে। চড়ে বসলাম।”
সকাল থেকে জানতেন আজ আর পাঁচ নয়, নামতে হবে তিনে। “কিন্তু সঙ্গে এটাও জানতাম যে যদি না পারি, তা হলে আবার জায়গা হবে পাঁচ। কিংবা ছয়। লোকে বলবে, লক্ষ্মী মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত। টপ অর্ডারে নয়,” বলছিলেন নায়ক। যাঁকে কি না ‘টিমম্যান’ হিসেবে চেনে বাংলা। ছকে বাঁধা কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। দলের দরকারে পাঁচ, ছয়, তিন এমনকী ওপেনিংয়েও নামতে হয়েছে।
ইচ্ছে হয় না উপরে খেলার? মনে হয় না, এতগুলো বছর মিডল অর্ডারে না খেললে আরও গোটা কতক সেঞ্চুরি যোগ হয় রেকর্ড বইয়ে?
“টপ অর্ডারে খেলতে কে না চায় বলুন? তবে এটা ঠিক উপরে খেললে হাতে অনেকগুলো ওভার থাকে,” বলছিলেন লক্ষ্মী। সাফল্যের কাঁধে হাত রেখে যাঁর ক্রিকেজীবনে গভীরতম যন্ত্রণাও হেঁটেছে পাশাপাশি। এক সময় দেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডার হয়েও আন্তর্জাতিক ম্যাচ বলতে তিনটে ওয়ান ডে। বাংলার হয়ে রঞ্জিতে গত বছর আড়াইশো করেছেন। কিন্তু নাইটদের সংসারে ব্রাত্য থেকেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। “কী করব? আমি ও সব আর ভাবি না। সবাই জানে, লক্ষ্মী কেমন ব্যাট করে। কেমন বল করে। গত দু’বছরে সাড়ে আটশো রান আছে আমার। টি টোয়েন্টিতে উইকেট নিয়েছি। এর পরেও বাদ পড়লে সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাাপর,” টুকরো মেঘ জমে লক্ষ্মীর গলায়। তা আরও গভীর হয় যখন বলেন, “সবাই আজ ভাবছে, এমন দেড়শো করে লক্ষ্মীরতন শুক্ল আইপিএল নিয়ে গরমাগরম কিছু বলবে। কিন্তু ও সব নিয়ে কথা বলতে চাই না। বরং, বলব পরিবারের কথা। রান করে বাড়ি ফিরলে সবাই হাসতে থাকে। ওই ছবিটার কথা ভেবে মাঠে নামি। বাংলার জন্য নামি। জানেন, আজ সকালেও ছেলে অগস্ত্য ফোনে বলছিল পাপা, আজ ম্যাচ হ্যায় না? দেড়শো করার পর ওর মুখটা মনে পড়ছিল।”
ইডেনে তাঁর বিস্ফোরণ দেখে ইতিমধ্যেই জল্পনা চলছে, আরও একবার কেন জাতীয় দলের দরজা তাঁর জন্য খুলবে না? এই তো হাল টিম ইন্ডিয়ার। ময়দান বলছে, এমন ইনিংস আসেনি বহু দিন। লক্ষ্মীর ইনিংসে অভিভূত কোচ রামন বলছেন, “কোলাভেরি!” যে তামিল শব্দের বাংলা মানে দাঁড়ায়: খুনে জোশ! আর লক্ষ্মী, তিনি কী ভাবছেন জাতীয় দল নিয়ে? “মাইক হাসি তো এই বয়সেও কামব্যাক করছে। অজিত আগরকর ভাবছে। তো আমি নয় কেন?”
বলতে-বলতে উঠে দাঁড়ান লক্ষ্মীরতন শুক্ল। আট ছক্কার পুরস্কার হিসেবে সদ্য পাওয়া নতুন ব্যাট নিয়ে ‘শ্যাডো’ শুরু হয়ে যায় প্রায়ন্ধকার ইডেনে। বোঝা যায়, প্রাক্তন বাংলা অধিনায়কের কাছে বর্তমানও এখন অতীত। চোখ আটকে শুধু আগামীতে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.