চালটা নিশ্চয়ই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। চাল বলতে লক্ষ্মীরতন শুক্ল-কে ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে তুলে আনা। আর তাতেই বাজিমাত। গ্রুপের সবচেয়ে হেভিওয়েট টিমের বিরুদ্ধে বোনাস পয়েন্ট তুলে সাত উইকেটে জয়। দু’ম্যাচে দশ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ টেবিলে এক নম্বরে উঠে আসা। নকআউটের নিশ্চিত হাতছানি।
বাংলা ৩-১, এই অবস্থায় দ্বিতীয় ওভারেই ক্রিজে এলেন। ফিরলেন ৩১তম ওভারে। মাঝের সময়টা ইডেন জুড়ে শুধুই লক্ষ্মী। এ রকম দাপুটে ইনিংস এ বছর বাংলার হয়ে কোনও ব্যাট থেকে আসেনি। প্রাক্তন বাংলা নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই ফেললেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার দেখা সেরা ওয়ান ডে ইনিংস। সবই ক্লিন হিট।” শুক্রবার ইডেনে যে ব্যাটিংটা করলেন লক্ষ্মী, এ রকম চালিয়ে যাওয়া মানে জাতীয় নির্বাচকদের খাতায় তাঁর নামটা অদূর ভবিষ্যতে ফের দেখা যেতেই পারে। আইপিএল ফাইভের আগে লক্ষ্মীর এই ফর্মের খবর কেকেআর মালিক শাহরুখ খানের কানে পৌঁছক বা না পৌঁছক, পুণে ওয়ারিয়র্স অধিনায়ক সৌরভ এখন লক্ষ্মীকে চাইছেন তাঁর টিমের জন্য। আইপিএলে কেকেআর-এর হয়ে গতবার একটিও ম্যাচ না খেলা লক্ষ্মীকে এ বার পুণের জার্সি গায়ে দেখা যেতেই পারে। |
তিন নম্বরেও পারি! সেঞ্চুরির পর ইডেনে লক্ষ্মী। শুক্রবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
মরসুমে লক্ষ্মীর প্রথম সেঞ্চুরি এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানটা এল একেবারে সহবাগ স্টাইলে। মাঝে ব্যাট ভাঙল এক বার, কিন্তু তাতে কী? ভাঙা ব্যাটেই চলল মস্তানি! ঝাড়খণ্ড বোলারদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিশাল বিশাল আটটা ছক্কা টাঙিয়ে দিলেন ইডেনের গ্যালারিতে। ৯৬ বলের মারকাটারি ‘দে ঘুমাকে’ ইনিংসে থাকল ১৬টা বাউন্ডারিও। সাধে কি তিনি বাংলার সেরা ম্যাচ উইনার! দ্বিতীয় ওভারের দু’নম্বর বলে সৌরভকে ফেরানোর উল্লাস ঝাড়খণ্ডের একেবারেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কারণ তারপর থেকেই তো শুরু লক্ষ্মীর তাণ্ডব। যেখানে ২৮০ কেন, ৩৫০ রানের টার্গেটকেও সাধ্যের মধ্যে দেখাচ্ছিল। আট নম্বর ওভার বাউন্ডারিতে দেড়শো টপকে পরের বলেই ছয় মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে লক্ষ্মী যখন ড্রেসিংরুমের রাস্তায়, ম্যাচ পুরোপুরি বাংলার পকেটে। পড়ে থাকা কুড়ি ওভারে ৭৩ রান তোলাটা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। যেটা ঋদ্ধিমান-অনুষ্টুপ হেসেখেলে করলেন। শেষ বেলায় ৬০ বলে ৫৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস এল ঋদ্ধির ব্যাট থেকে। উল্টো দিকে অনুষ্টুপও রানের গতি কমতে দেননি।
লক্ষ্মীর ‘বুম-বুম’ ব্যাটিংয়ের ছায়ায় ঢাকা পড়ল এ দিন ডেথ ওভারে অশোক দিন্দা-সামি আহমেদের দিশেহারা, এলোমেলো বোলিং। ৪৭ ওভারে ঝাড়খণ্ড যখন ২৩৯-৬, স্কোর মেরেকেটে ২৫০-২৬০-র মধ্যে থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত। ইডেনে হল ঠিক উল্টোটা। শেষ তিনটে ওভার যেন যেখানে খুশি, যে ভাবে খুশি রান তোলার প্রদর্শনী। এক দিকে বেহিসেবি সামি, অন্য দিকে অগোছালো দিন্দা ব্যাটসম্যানদের উপহার দিলেন যথেচ্ছ ফুলটস আর হাফ-ভলি। শেষ তিন ওভারে উঠল ৪১ রান। বিপক্ষের স্কোর চড়চড় করে উঠে গেল ২৮০-তে। যেখানে উজ্জ্বল উপস্থিতি বলতে ইশাঙ্ক জাগ্গির ১২৯ নট আউট। ২৩ বছরের ডান-হাতি ইনিংস সামলালেন যথেষ্ট পরিণতির সঙ্গে। ক্রিজে জমে যাওয়ার পর অহেতুক ঝুঁকি নেননি। শেষ ওভার পর্যন্ত থেকে দলকে নির্ভরতা দিয়েই ফিরেছেন। বরং সৌরভ তিওয়ারি (৪৭) ইরেশ সাক্সেনার বলে নিজের উইকেট ছুড়ে এলেন। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ড ইনিংসে বলার মতো স্কোর বলতে কুমার দেওব্রত-র ২৬ বলে ৪০।
কিন্তু দিনের শেষে শুক্রবারের ইডেন মানে শুধুই লক্ষ্মী। দাপট, আগ্রাসন এবং অবশ্যই বিস্ফোরণ।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঝাড়খণ্ড ২৮০-৬ (ইশাঙ্ক ১২৯ নঃআঃ, সৌরভ তিওয়ারি ৪৭, সামি আহমেদ ৪-৮৬)।
বাংলা ২৮২-৩ (লক্ষ্মীরতন ১৫১, ঋদ্ধিমান ৫৫ ন.আ., এস নাদিম ২-৬৯)।
|
বিজয় হাজারের অন্য ম্যাচে এ দিন সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ৯৫ রানে জিতল ওড়িশা। ওড়িশার ২৯১ তাড়া করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ১৯৬ রানে শেষ হয়ে গেল ত্রিপুরা। ওড়িশার হয়ে চার উইকেট নিয়েছেন পরেশ পটেল (৪-৩০)। |