|
|
|
|
ছোবড়া দিয়ে মূর্তি গড়েন ‘শিল্পী’ পুলিশ |
তাপস ঘোষ • চুঁচুড়া |
পেশাই নেশা ধরালো তাঁকে। সরকারি চাকরির বাধ্যবাধকতা সামলে তিনি এখন পুরোদস্তুর শিল্পী।
এই হয়তো রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে গণ্ডগোল সামাল দিচ্ছেন, তাড়া করে দুষ্কৃতী ধরছেন। আর কাজের অবসরে? তাঁর হাতের ছোঁয়ায় কখনও মূর্ত হচ্ছেন ‘শান্তিদূত’ মাদার টেরিজা, আবার সেই হাতেই ফুটে উঠছে ‘সন্ত্রাসবাদীদের শিরোমণি’ ওসামা বিন লাদেনের দাড়ি-ভর্তি মুখ। সব কিছুই গড়ে উঠছে নারকেলের মালা বা ছোবড়া দিয়ে।
তিনি অজয় সেনগুপ্ত। হুগলির চুঁচুড়া থানার কনস্টেবল। এমনিতে শিল্পচর্চার খুব একটা চর্চা ছিল না। অভ্যাসটা তৈরি হল কয়েক বছর আগে। সে বার শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় ‘ডিউটি’ পড়েছিল অজয়বাবুর। নানা জায়গা থেকে মাটি, কাঠ-সহ নানা জিনিসের পসার নিয়ে ওই মেলায় আসেন কারুশিল্পীরা। তাঁদের হাতের কাজ বেশ মনে ধরে অজয়বাবুর। মনে মনে ভাবেন, তিনি যদি এমনটা তৈরি করতে পারতেন! যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। তবে, মাটি বা কাঠ নয়। তিনি চেয়েছিলেন, এমন কিছু দিয়ে মডেল বানাতে যাতে খরচ পড়বে কম, অথচ জিনিসটা হবে বেশ শৌখিন। টিঁকবে অনেক দিন। বিস্তর ভাবনা চিন্তার পরে উপাদান হিসেবে বেছে নিলেন নারকেল। এর পরেই শিল্পী হিসেবে হাতেখড়ি। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে হলেও প্রতিভা প্রকাশিত হতে বিশেষ সময় লাগেনি। তাঁর শিল্প নৈপুণ্যে গড়ে উঠতে থাকে একটার পর একটা সুদৃশ্য মডেল। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
থানায় প্রচুর কাজ। তবে, সেই কাজ শেষ হলেই ‘ঝানু’ এই পুলিশকর্মী বসে পড়েন ঝুনো ও ভুয়ো নারকেল নিয়ে। সঙ্গে ছুরি, কাঁচি, বাটালি থেকে রং-তুলি। তাতেই তৈরি হয় একটার পর একটা মডেল। কাজ দেখে তাক লাগছে সকলের। বিভিন্ন ধরনের গণেশ মূর্তি, নৌকায় হাল ধরা মাঝি, রকমারি ফুলদানি, পথচলতি নানা মানুষের মুখ আরও কত কী। অজয়বাবু বলেন, “বাড়িতে থাকলে প্রতিদিন অন্তত ঘণ্টা তিনেক এই কাজ করি। বেশ নেশা হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন আশপাশে দেখা জিনিসপত্র বানাতে বেশ লাগে। শুধু মাথায় রাখি, এর জন্য নিজের পেশার যেন কোনও ক্ষতি না হয়।” অজয়বাবু জানান, একটি মূর্তি তৈরি করতে সময় লাগে সতেরো থেকে আঠারো ঘণ্টা। তৈরি করতে খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পুলিশের দায়িত্ব সামলে সপ্তাহে একটি মাত্র মূর্তি তৈরি করতে পারেন। তবে, বিক্রি করেন না নিজের তৈরি এই সব শিল্পকর্ম। শুধুই বাড়ির চার দেওয়ালে সাজিয়ে রাখেন।
প্রদর্শনী করার ইচ্ছে থাকলেও, নিজের দফতরের অনুমতি পাবেন কী না, তা নিয়ে সাতপাঁচ ভেবে এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। তবে, শিল্প নৈপুণ্যের স্বীকৃতি হিসেবে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর থেকে দু’বার পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথমে ২০০০-০১ সালে। দ্বিতীয় বার ২০০৩-০৪ সালে। |
|
|
|
|
|