কলকাতায় স্পাইস জেটের পর দিল্লিতে জেট এয়ারওয়েজ-এর উড়ানে হেনস্থা করা হল প্রতিবন্ধী এক যাত্রীকে।
গত সোমবার জেট এয়ারওয়েজের বিমানে দিল্লি থেকে রায়পুর যাচ্ছিলেন অঞ্জলি অগ্রবাল। অভিযোগ, তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দুর্ব্যবহার করে উড়ান সংস্থার কর্মীরা। এ ঘটনার পর কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান অঞ্জলি। ইতিমধ্যেই জেট এয়ারওয়েজ ও ডিজিসিএ-এর কাছে ঘটনার কারণ জানতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এক মাসের মধ্যে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে তাদের।
সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত জীজা ঘোষ গত রবিবারই অভিযোগ করেন, শারীরিক কারণ দেখিয়ে স্পাইস জেটের বিমান থেকে তাঁকে নামিয়ে দেন পাইলট। সেই ঘটনার পরেই সংস্থার পক্ষ থেকে পাইলটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার পাঁচ দিন পরে শুক্রবার রাতে সংস্থার পক্ষ থেকে যে বার্তা পাঠানো হয়েছে, তাতে সেরিব্রাল পলসি নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থাকে মোটা টাকা অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও পাইলটের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথার উল্লেখ নেই।
চলাফেরা তো দূরের কথা, ভাল করে দাঁড়াতেও পারেন না স্নায়ুরোগে আক্রান্ত অঞ্জলি। তাঁর কথায়, “জেট এয়ারওয়েজের এক কর্মী আমায় প্রশ্ন করলেন, আমি আদৌ উড়ান ধরার মতো সুস্থ আছি কি না।” এ কথার অর্থ জানতে চাইলে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বন্ড ধরিয়ে দেওয়া হয় অঞ্জলিকে। বলা হয়, বন্ডে সই না করলে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না তাঁকে। এটাই নিয়ম। অগত্যা, সই করে দেন অঞ্জলি।
এ নিয়ে জেট অবশ্য জানিয়েছে, ওই মহিলার পায়ে প্লাস্টার করা ছিল। তা দেখে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, কিছু দিন আগেই ওঁর পায়ে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাতেই তাদের কর্মী বন্ডে সই করার প্রস্তাব দেন। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ লিফটেরও ব্যবস্থা নেই রায়পুরে, সে কথাও তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অঞ্জলির অভিযোগ, রায়পুর বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে প্রথমে তাঁকে জানান জেট এয়ারওয়েজের কর্মীরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বিমান সংস্থার এক অফিসার জানান, রায়পুরের মতো ছোট শহরে তাঁদের হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা নেই। এর পরে অঞ্জলিকে পাঁজাকোলা করে তুলে বিমানবন্দরের গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় চার পুরুষ কর্মীকে। তাঁর আরও অভিযোগ, কথা না শুনলে দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় অঞ্জলিকে।
এর পর ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেটের আর এক কর্তা। তিনি বলেন, “টিকিট বুক করার সময় আপনি হুইল চেয়ারের আবেদন করেননি। তাই সে সুবিধা আপনি পাবেন না।” অঞ্জলি জানান, তিনি অন লাইনে টিকিট কাটার সময় হুইল চেয়ারের আবেদন করেছিলেন। ওই কর্তা তখন বলেন, “হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের অন-লাইনে টিকিট দেওয়া হয় না।” প্রায় ৩৫ মিনিট বাগবিতণ্ডা চলার পর অবশেষে হুইল চেয়ার আসে। অঞ্জলির কথায়, “ওরা বুঝতে পেরেছিল কোনও ভাবেই আমাকে দমানো সম্ভব নয়। আমাকে রীতিমতো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় চেয়ারে।” |