আসন্ন বাজেটে রেলের আধুনিকীকরণের জন্য বাড়তি টাকা জোগাতে ক্রমশ চাপ বাড়ছে মনমোহন সিংহ-প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপর। এ বারে স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বাধীন রেলের আধুনিকীকরণ কমিটিও কেন্দ্রের কাছে বিপুল বাড়তি অর্থ দাবি করল। আগামী সোমবার রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে জমা পড়বে পিত্রোদা কমিটির এই রিপোর্টটি।
রেলমন্ত্রী এবং রেল ইউনিয়নগুলির তরফে এত দিন ধরে লাগাতার বিপুল অর্থের দাবি করা হচ্ছিল। সম্প্রতি রেলের জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্য বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে চিঠি দিয়েছেন রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান টি আর বালু। গত সপ্তাহেই রেল নিরাপত্তা কমিটিও রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে বিপুল অর্থ দাবি করেছে। এ বারে পিত্রোদা কমিটিও নিজেদের রিপোর্টে জানিয়ে দিল, অর্থ মন্ত্রক সাহায্য না করলে রেলের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে যাবে। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, রেলের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যেতে অবিলম্বে সাহায্যের পরিমাণ বাড়াক অর্থ মন্ত্রক। আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কেন্দ্রের থেকে অন্তত ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা সাহায্যের দাবি জানানো হয়েছে রিপোর্টে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা গত বারের কেন্দ্রীয় সাহায্যের তুলনায় প্রায় তিন গুণেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন, ভারতীয় রেলকে ২০২০ সালের মধ্যে ‘নেক্সট লেভেল’-এ উন্নীত করতে হলে অবিলম্বে বিপুল পরিমাণে অর্থ রেলের পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে যখন ধরে নেওয়া হচ্ছে, আগামী বাজেটেও যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির মতো কোনও ‘অপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত রেলমন্ত্রী নেবেন না, তখন রেলকে এক ধাক্কায় বাজেট সাহায্য প্রায় তিন গুণ বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত কি নেবেন মনমোহন-প্রণব? |
চাই বড় অর্থ
• রেল ট্র্যাক ও ব্রিজ ৩৩,০৪৬ কোটি
• সিগন্যালিং ব্যবস্থা২৫ হাজার কোটি
• আধুনিক কোচ৭২,৫৭১ কোটি
• স্টেশন আধুনিকীকরণ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি
• সুরক্ষা ব্যবস্থা৩৯,৮৩৬ কোটি
• পণ্য করিডর২ লক্ষ কোটি
• পিপিপি প্রকল্পে৯৭ হাজার কোটি |
|
রেল মন্ত্রক মনে করছে, কেন্দ্রের বর্ধিত সাহায্য পাওয়ার পথে প্রধান বাধা হল, গত ৮-৯ বছর ধরে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি না হওয়া। পণ্য মাসুলও সে ভাবে বাড়েনি গত কয়েক বছরে। ফলে রেলের আয় কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। রেল মন্ত্রকের এক সূত্রের বক্তব্য, আধুনিকীকরণের জন্য যোজনা কমিশনের একাংশ রেলকে বাড়তি অর্থ সাহায্যে রাজি। কিন্তু তাদের অন্যতম শর্তই হল, যাত্রীভাড়া বাড়াতে হবে। অথচ বাস্তব হল, উত্তরপ্রদেশের ভোট পরবর্তী সময়েও রেল মন্ত্রক যদি তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে থেকে যায়, তা হলে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মনে করছেন রেল কর্তারা। কেন না, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সরাসরি বা ঘুরপথে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির জন্য দফায় দফায় আর্জি জানিয়েও বিফল হতে হয়েছে দীনেশ ত্রিবেদীকে।
এই পরিস্থিতিতে রেল মন্ত্রক মনে করছে, যাত্রী ভাড়া থেকে আয়ের রাস্তা না খুঁজে বিকল্প পথে হেঁটে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হোক। কিন্তু তা বেশ সময়সাপেক্ষ। এক কর্তার কথায়, “আমরা স্টেশনগুলির খোলনলচে বদলে সেগুলিকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু বড় মাপের ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পিপিপি মডেলের মাধ্যমে রূপায়ণ করার কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সব রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। এর থেকে আয় আসতে সময় লাগবে।” তাই এই মুহূর্তে, বিশেষ করে সুরক্ষা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় মাপের কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে মন্ত্রক।
স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেলকে সামগ্রিক ভাবে একটি আধুনিক চেহারা দিতে আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন। যে টাকার প্রায় ত্রিশ শতাংশ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অর্থ মন্ত্রকের থেকে বাজেট সাহায্য হিসেবে চাওয়া হয়েছে রিপোর্টে। কমিটি নিজেদের রিপোর্টে নয় লক্ষ টাকার কথা বললেও দীনেশ ত্রিবেদীর মতে, এই মুহূর্তে ভারতের রেলকে উন্নত দেশের রেল পরিকাঠামোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো জায়গায় নিয়ে যেতে গেলে প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকার প্রয়োজন। রেল মন্ত্রক ও পিত্রোদার কমিটি আধুনিকীকরণের জন্য যে ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে রেল ট্র্যাক ও ব্রিজের আধুনিকীকরণ, দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সমস্ত ট্রেনে রাজধানী ধাঁচের কোচ ব্যবহার, সুরক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্র ও সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নতি। অর্থ বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, পণ্য করিডোর, হাইস্পিড করিডরের মতো সময়োপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলিতে। |