বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা জল বণ্টন এবং ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি এই দু’টি বিষয়ই দ্রুত বাস্তবায়িত করতে চান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভির সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট আশ্বাস দিয়ে মনমোহন সিংহ বলেছেন, দুটি বিষয়েই ‘সামান্য কিছু কাজ’ বাকি রয়েছে।
সীমান্তে গুলি চালানো নিয়ে অস্বস্তি কাটাতেও আজ দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পর্যায়ের বৈঠকে আজ সকালেই পি চিদম্বরম খাতুনকে জানিয়েছিলেন, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে সীমান্ত রক্ষীদের হাতে মারধরের যে ঘটনা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি হবে না। ওই ঘটনায় ১০৫ নং ব্যাটালিয়নের ৮ জওয়ানের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএসএফ।
তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে ওই চুক্তি হতে পারেনি। আজ বাংলাদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে তাঁর সরকার ঐকান্তিক। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার মধ্যে তাঁর সরকারকে চলতে হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেই শরিকদলের (তৃণমূল) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও চলছে। শীঘ্রই তার ফল পাওয়া যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নদী বিশেষজ্ঞের কাছে তিস্তা নিয়ে যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তার কাজ শেষ হলে ফের বিষয়টি এগোবে। কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনাও ফের শুরু হবে।
ছিটমহলগুলি হস্তান্তরের বিষয়টিও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য দিল্লি তৎপর হয়েছে। চিদম্বরম আজ খাতুনকে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে নতুন চুক্তি করতে ভারতকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আগামী বাজেট অধিবেশনেই সরকার এ বিষয়ে বিল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কূটনীতিকদের মতে, তিস্তা চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যাতে ভাটার টান না আসে, তা নিশ্চিত করতে আজ সক্রিয় থেকেছে মনমোহন সরকার। এই পরিপ্রেক্ষিতেই দু’দেশের সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার বিষয়টিতে আজ জোর দিতে চেয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ২৩টি ‘বিপজ্জনক’ বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) চিহ্নিত করা হয়েছে আজকের বৈঠকে। সেগুলিতে দু’দেশই তাদের শক্তি বাড়াবে।
চিদম্বরমের কথায়, “নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। গত সাত সপ্তাহে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। আশা করি বছরের বাকি সময়টাও সে রকমই থাকবে।” অন্য দিকে সাহারা খাতুন চিদম্বরম তথা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “চিদম্বরম যখন জুলাই মাসে ঢাকা গিয়েছিলেন তখন তিনি আমাদের কথা দিয়েছিলেন যে সীমান্তে যাতে গুলি না চলে তার জন্য সব রকম প্রয়াস করা হবে। সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনা নামাতে হবে শূন্যে।
পর্যায়ক্রমে এ ব্যাপারে সাফল্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ভারতের কাছ থেকে যে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে, তার কূটনৈতিক বিনিময়ের প্রশ্নে আজ উদারহস্ত থেকেছে ঢাকাও। চিদম্বরমের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সাহারা খাতুন জানিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতেই আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “বিষয়টি নিয়ে বিচার চলছে। আদালতের কাজ শেষ হওয়া মাত্রই আমরা চেটিয়াকে ভারতে পাঠিয়ে দেব। এক দিনও বেশি তাকে ধরে রাখার পক্ষপাতী নয় বাংলাদেশ।” |