জেরার মুখে পরস্পর-বিরোধী বয়ানে এখনও পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে ধৃত তিন অভিযুক্ত। সেই সঙ্গে অভিযোগকারী মহিলার কাছে এখনও আসছে হুমকি-ফোন। ফলে, ফেরার আরও তিন দুষ্কৃতীকে বাগে আনা পর্যন্ত অস্বস্তিতে লালবাজারের কর্তারা। অন্যতম অভিযুক্ত কাদেরের খোঁজে কলকাতায় ওই যুবকের পরিচিত অনেকের সঙ্গেই দফায় দফায় কথা বলছে পুলিশ। এক নজরে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের তদন্ত আপাতত এইখানে দাঁড়িয়ে।
ঠিক কী ভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে ধৃতেরা?
গোয়েন্দা বিভাগের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “জেরার মুখেও ওই যুবকেরা প্রায় পেশাদার অপরাধীর মতো ঠান্ডা মাথায় ভুল বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই রাতে ওই মহিলাকে গাড়িতে তোলার পরে কে কখন কোথায় বসল, কখন গাড়ি থেকে নামল, এ বিষয়েও ওরা ধন্দে ফেলার চেষ্টা করছে।” কয়েকটি বিষয় নিয়ে পুলিশ এখনও অনিশ্চিত। যেমন:
১) নাসির না জনি, কে নিজেকে ওই মহিলার কাছে ‘আজহার আলি’ বলে পরিচয় দিয়েছিল, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
২) নাসির ওই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিল কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে।
৩) জনিও মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিল বলে কেউ কেউ পুলিশকে বোঝাচ্ছে।
৪) যে গাড়িতে ঘটনাটি ঘটে, তার মালিক সুমিতও কেঁদে-কেটে দাবি করছে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে।
এই অবস্থায় অভিযোগকারী মহিলার কাছে এখনও রোজই হুমকি-ফোন আসছে বলে পুলিশ দুশ্চিন্তায়। মহিলাকে অভিযোগ তুলে নিতে বলে বৃহস্পতিবার রাতেও ফোন আসে। সেই সূত্র কাজে লাগিয়েও তদন্তে এগোনোর কথা ভাবছেন লালবাজারের কর্তারা। অভিযুক্তদের মধ্যে কাদের, জনি ও রাশেদ ওরফে আলিভাই এখনও অধরা। তাদের ধরতে তা হলে কী করছে পুলিশ?
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ ফের কাদেরের বান্ধবী নুসরত জহানের সঙ্গে কথা বলেছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন নিজে টালিগঞ্জের চিত্রাভিনেত্রী নুসরতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। কাদেরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্বীকার করে নুসরত সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই কোনও অজানা নম্বর থেকে কাদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে জানতে পারে পুলিশ। ওই ফোনের সূত্র ধরেই লালবাজারের একটি তদন্তকারী দল কাদেরের খোঁজে তড়িঘড়ি মুম্বই রওনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ যাত্রায় পুলিশকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। তবে তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “আমাদের বিশ্বাস, কাদের কলকাতায় পরিচিতদের মধ্যে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তাদের কাছ থেকেই ওর বিষয়ে সূত্র মিলবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, কাদের নম্বর পাল্টে ফোন করছে বলে তার গতিবিধির উপরে একটানা নজর রাখা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ যাত্রা অবশ্য গোয়েন্দাপ্রধান ও নুসরতের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশমহলে চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। নুসরতের ঘনিষ্ঠ মহলের তরফেও কোনও পুলিশকর্তার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
তদন্তের জট খুলতে পুলিশ আরও কয়েকটি খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকেও এখন নজর রাখছে। যেমন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি, ঘটনার রাত থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে (১৪ ফেব্রুয়ারি)-তে কাদের, জনিরা কলকাতা ছাড়া পর্যন্ত কোন বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিল তা খতিয়ে দেখে সূত্র জোগাড় করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র সন্ধ্যায় কাদের ও নুসরতের যোগাযোগ হয় বলে পুলিশ জেনেছে। |