বিনা লাইসেন্সে প্রায় ৩৫ হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রমরমিয়ে ব্যবসা করছে এই শহরে। কলকাতা লাইসেন্স দফতর সূত্রের খবর, ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা লাইসেন্স-ফি পুরসভার ঘরে জমা পড়ার কথা। কিন্তু পুরসভা তাদের লাইসেন্স দিতে না-পারায় তা আদায় করা যায়নি।
কিন্তু কেন?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে কলকাতা শহরের প্রায় ৪২টি বড় বড় ভবন ও বাজারকে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার নিরিখে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়। সেখানকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পুরসভা, দমকল, পুলিশ ও সিইএসসি-কে নিয়ে কমিটিও তৈরি হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ওই সব বাড়ির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বিধিসম্মত হলে তবেই লাইসেন্স মিলবে। এই তালিকায় বাগরি মার্কেট, মেহতা বিল্ডিং, সদাসুখ কাটরা, চাঁদনি, নন্দরাম ও কুইন্স ম্যানসন-সহ বেশ কয়েকটি বড় বড় ভবনের নাম রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার বলেন, “কিছু কিছু বাড়ি এত পুরনো যে, সেখানে বিধিসম্মত ভাবে অগ্নি-নির্বাপণের কাজ করাটাই দুঃসাধ্য। তাই আটকে আছে কাজ। বন্ধ করা হয়েছে লাইসেন্স দেওয়া।”
সম্প্রতি নন্দরাম মার্কেট (ছ’তলা পর্যন্ত) চালু করা নিয়ে দমকল ও পুরসভার মধ্যে চাপান-উতোর আরও বেড়েছে। ওই বাজার পুড়ে যাওয়ার পরে সেখানকার দোকানিদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয় পুরসভা। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। দিন কয়েক আগে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় পুরসভার বিল্ডিং দফতরের অফিসারদের নিয়ে ওই ভবন পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে দমকলের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে জানিয়ে দেন, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির কাজ এখনও বাকি। ফলে ওই বাজারে দোকানিদের লাইসেন্স দেওয়ার কাজ ফের ঝুলে যায়। শুক্রবার পুরসভায় দমকল, পুলিশ ও সিইএসসি-কে নিয়ে আবার বৈঠক করেন মেয়র। পরে শোভনবাবু বলেন, “মোট ৪২টি ভবনের মধ্যে ২২টির কাজ কিছুটা এগিয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ওই সব ভবনের ব্যবসা-কেন্দ্রগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হবে।”
বিনা লাইসেন্সে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা চলায় পুরসভার তো ক্ষতি হচ্ছে? মেয়র বলেন, “ক্ষতি হলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করাটাও জরুরি।”
দমকলের কাজে ঢিলেমির অভিযোগ তুলেছেন নন্দরাম মার্কেট বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সমরকান্তি চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা অগ্নি-নির্বাপণের সব ব্যবস্থাই করেছি। তা সত্ত্বেও দমকল ছাড়পত্র দিচ্ছে না।”
এ বিষয়ে দমকল দফতরের এক পদস্থ অফিসার বললেন, “অগ্নি-নির্বাপণের কিছুটা কাজ এখনও বাকি রয়েছে। ওঁদের তা করে ফেলতে বলেছি। আগামী ১ মার্চ আবার ওখানে যাব।” |