মোটরভ্যানে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে কালনা মহকুমায়। গত দু’সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, বছর দেড়েকের মধ্যে হেমায়েতপুর, নাদনঘাট, সিংহপুর, পারুলিয়া, দোগাছিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় মোটরভ্যানের ধাক্কায় বা চলন্ত ভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের।
কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “পুরসভা মোটরভ্যান সম্প্রতি নিষিদ্ধ করেছে। তার পরেই বেশ কিছু ভ্যানচালক তাঁদের জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে বলে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে। সেখানে মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা ছাড়াওথাকবেন পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।” |
সম্প্রতি কালনা শহরের নেপপাড়ায় একটি সরু রাস্তায় সাইকেলভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে মোটরভ্যানের ধাক্কায় খসে পড়ে সামনের দেওয়ালে থাকা কংক্রিটের ‘মিটার-বক্স’। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল এক আট বছরের বালক। তার গায়ের ওপর ‘বক্স’টি পড়ে গেলে সংজ্ঞা হারায় সে। পরে মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরে পরের দিনই পুরসভা মোটরভ্যান চলাচল ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবিকার সুবিধার্থে শহরের বাইরে এই যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনা কমেনি। মঙ্গলবার সকালে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চুপি গ্রাম থেকে স্টেশন যাওয়ার জন্য মা ও বোনের সঙ্গে মোটরভ্যানে উঠেছিল চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রেজিনা খাতুন (৯)। গন্তব্যে পৌঁছনোর কিছু আগে রেজিনার ওড়না ভ্যানের চাকায় জড়িয়ে যায়। ছাড়াতে গেলে ভ্যানের চাকায় দলা পাকিয়ে যায় তার শরীর। এই ঘটনারই দিন দু’য়েক আগে বুলবুলিতলায় মোটরভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান অন্নপূর্ণা মফদার নামে এক গৃহবধূ। প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। সোমবার মৃত্যু হয় তাঁর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে কালনা মহকুমায় ভ্যানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দশ হাজারে। শহরে হয়েছে ভ্যান তৈরির কারখানাও। চারদিক খোলা এই ভ্যানগুলিতে যাত্রীদের ধরার জন্য থাকে একটি রড। ফলে ‘ব্রেক’ কষলেই ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা। পুরনো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ‘হেডলাইট’ নিয়েই চলছে ভ্যানগুলি। কালনা শহরের বাসিন্দা মনোতোষ মোদকের কথায় “অধিকাংশ ভ্যানেরই আলোর ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অন্ধকার রাস্তায় পথচারীদের ধাক্কা মারতে পারে যে কোনও সময়ে।” মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম এলাকার কুরদুস শেখের দাবি, “প্রশাসনের গাফিলতিতেই গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে মোটরভ্যানের সংখ্যা।”
সাড়ে তিন বছর আগে আদালত মোটরভ্যান ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করার পরে প্রশাসনের তৎপরতায় প্রায় ২৮টি ভ্যান আটক করা হয়। জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দেন ভ্যানচালকেরা। প্রশাসনের তৎপরতা ‘শিথিল’ হতেই ফের রমরমা বেড়েছে মোটরভ্যানগুলির। |