নিহত নেতা প্রদীপ তা-র বিরুদ্ধে পুরনো কিছু খুনের মামলা নিয়ে জলঘোলা আটকাতে দেওয়ানদিঘির ‘ঘরে-ঘরে’ প্রচার চালানোর রাস্তা নিচ্ছে সিপিএম। শুক্রবার দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে সিপিএম এমনিতেই ‘কোণঠাসা’। তার উপর নিহত নেতার বিরুদ্ধে পুরনো কিছু খুনের মামলার বিষয় ফের প্রকাশ্যে এসে পড়ায় তারা ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছে। বিশেষত আশির দশকে কংগ্রেস বিধায়ক কাশীনাথ তা খুনে প্রদীপবাবুর সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ (যদিও পরে তিনি ওই মামলায় বেকসুর খালাস হয়েছিলেন) ফের ওঠায় ‘আন্তরিক রাজনৈতিক মোকাবিলা’র প্রয়োজন বোধ করছে প্রাক্তন শাসকদল। সেই জন্যই এলাকার দরজায় দরজায় যাওয়া। |
কারণ রাস্তায় নেমে ‘মোকাবিলা’ করতে গেলে যে সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োজন হয়, এমনকী ‘সাড়া-জাগানো’ মৌনী মিছিল করার জন্যও, তা এই মুহূর্তে সিপিএমের নেই। একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত বর্ধমানেও নয়। ফলে জেলা ও স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি ‘সংঘাতে’ যাওয়ার বদলে পুুরনো কায়দায় দরজায় দরজায় কড়া নাড়ার কথা ভাবছে সিপিএম। প্রদীপবাবু যেখানে খুন হন, সেই দেওয়ানদিঘির পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়েই ছোট-ছোট সভা করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিপিএম সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন শব্দবিধি বলবৎ থাকায় তারা প্রকাশ্যে বড় জমায়েত করতে পারছে না। তাই ‘আপৎকালীন’ ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত ওই প্রচার চালানো হবে। মাধ্যমিক শেষ হচ্ছে ৭ মার্চ। তার পরে আবার ১৬ মার্চ থেকে শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক। ফের বলবৎ হবে শব্দবিধি। তা শেষ হতে সেই এপ্রিল। ফলে, মাইক বাজিয়ে বড় জমায়েত করতে গেলে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। অর্থাৎ, এই পরিস্থিতিতেই অবস্থা ‘আপৎকালীন’ বলে প্রধান বিরোধী দল প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছে।
এ দিন বর্ধমান শহরের পার্কার্স রোডে সিপিএমের জেলা সদর দফতরে প্রধান আলোচ্য অবশ্য ছিল আসন্ন সাধারণ ধর্মঘটের কর্মসূচি। দলের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন, জেলা সম্পাদক অমল হালদার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উদয় সরকার, আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর মতো জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যই হাজির ছিলেন। বৈঠকের পরে অমলবাবু বলেন, “আমরা রাজনৈতিক ভাবেই খুনের মোকাবিলা করি। মানুষকে জমায়েত করি। কিন্তু এখন মাধ্যমিক চলায় শব্দবিধি বলবৎ আছে। তাই পরীক্ষা শেষের পরে, এপ্রিল মাসেই আমরা বড় জমায়েত করার কথা ভাবছি। সেখানে আসার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধ করব।”
শিলিগুড়ি থেকে প্রদীপবাবুর স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে দেখা করতে এসে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, “আমাদের দল প্রতি আক্রমণ করে না, জমায়েত করে গণ-প্রতিরোধ করব।”
কিন্তু দেওয়ানদিঘির মতো বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় এই ‘প্রতিরোধের’ শক্তি সিপিএমের আদৌ আছে কি না, তা নিয়েই ‘সংশয়’ রয়েছে। অশোকবাবু নিজেই বলেন, “ওখানে আমাদের লোকেরা সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে। অনেক লোক লুকিয়ে-চুরিয়ে ব্রিগেডে গিয়েছিল।” আপাতত আগামী ২ মার্চ বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে দুই নিহত নেতার স্মরণসভা হবে বলে এ দিন সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে। |