সিপিএমের দুই নেতার খুনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বর্ধমানে ডাকা ১২ ঘন্টার বনধ্কে কেন্দ্র করে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চাপানউতোর অব্যাহত রইল শুক্রবারেও।
ধর্মঘটের দিন পঞ্চায়েত কর্মীরা কাজে না আসায় বারাবনি ব্লকের পুচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার তালা ঝুলিয়ে দিলেন বারাবনি ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সদস্য সমর্থকেরা। শুক্রবার বেলা ১টা পর্যন্ত ওই তালা ঝোলানো ছিল। পরে বারাবনির বিডিও জুলফিকার হাসানের হস্তক্ষেপে তালা খোলা হয়।
অন্য দিকে, কয়েক জন কর্মী বন্ধের দিন কাজে যোগ দিতে এলেও পঞ্চায়েত অফিসের তালা খোলা হয়নি। এই অভিযোগে সিপিএম পরিচালিত রতিবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কার্যালয় খোলার এবং গ্রাম প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করবেন বলেছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি।
বারাবনি ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসিত সিংহের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার এলাকার বাসিন্দারা পুচরা গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতরে প্রয়োজনীয় কাজে যান। কিন্তু তাঁরা দেখেন কার্যালয়ে তালা খোলা হয়নি। কর্মীরাও কেউ কাজে আসেননি। তিনি বলেন, “আমরা এই কথা জানার পরেই ঘটনাস্থলে যাই। ওই অবস্থা দেখে কার্যালয়ের গেটে অন্য তালা ঝুলিয়ে দিই। বিডিওর কাছে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছি।” তাঁর আরও অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতের কর্মীরা নিয়মিত কাজে আসেন না। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে একশো দিন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গ্রামবাসীরা সমস্যায় পড়েন। সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, পুচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতটি তাদের দখলে রয়েছে। তাই তৃণমূল কংগ্রেস উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পঞ্চায়েতের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। সিপিএমের বারাবনি জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ধর্মঘটে কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি একান্ত ব্যক্তিগত। তবে দফতরে তালা ঝুলিয়ে কাজের পরিবেশ নষ্ট করাটা অপরাধ।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বন্ধের পরের দিন শুক্রবার পঞ্চায়েত কর্মীরা কাজে এসে পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলতে দেখেন। অগত্যা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। খবর পেয়ে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন বিডিও জুলফিকার হাসান। তিনি যুব কর্মীদের কাছে তালা খুলে দেওয়ার আবেদন জানান। তালা খুলতে রাজি হননি তাঁরা। উল্টে, বৃহস্পতিবার কর্মীরা কাজে আসেননি কেন, তা নিয়ে তদন্ত দাবি করেন। এর পরে বিডিওর হস্তক্ষেপে বেলা ১টা নাগাদ তালা খুলে দেন তৃণমূলের কর্মীরা। বিডিও বলেন, “আমি বিষয়টি জেনেছি। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, কর্মীরা নিয়মিত কাজে আসছেন না। ফলে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়ছেন। আমি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করব। সমস্যা মিটে যাবে।”
অন্য দিকে, রতিবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিখা বাদ্যকর বলেন, “আমি কী করে তালা খুলব? নির্দিষ্ট কর্মী অনুপস্থিত থাকায় তালা খোলা যায়নি।’’ বিডিও সুবোধ ঘোষ জানান, বৃহস্পতিবার তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে কার্যালয় না খোলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। পরে আর কোনও খবর না দেওয়ায় তিনি ধরেই নিয়েছিলেন কার্যালয় খোলা হয়েছে। তাঁর আশ্বাস, সোমবার বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। |