প্রায় তেত্রিশ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন ইসিএল কর্মী মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়। স্বামীর খোঁজ পেতে পুলিশ থেকে শুরু করে অনেক নেতা-মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন মাধবী চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। আইএনটিইউসি নেতা মধুসূদনবাবুকে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছিল বলে দাবি স্ত্রী মাধবীদেবী ও ছেলে চঞ্চলবাবুর। এর কিনারা করার জন্য তাঁরা এ বার আবেদন করেছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
মাধবীদেবী জানান, ১৯৭৯ সালের ২০ অগস্ট ‘ডিউটি’ সেরে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন জামুড়িয়ার চুরুলিয়ার বাসিন্দা, ইসিএল কর্মী মধুসূদনবাবু। আর ফেরেননি। মাধবীদেবী ও চঞ্চলবাবুর দাবি, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁকে খুন করেছে। চঞ্চলবাবুর কথায়, “বাবা আইএনটিইউসি-র স্থানীয় শাখা সম্পাদক ছিলেন। সিপিএমের সঙ্গে মতান্তরের জেরেই বাবাকে খুন করা হয়।” মাধবীদেবীর আরও দাবি, প্রতিবেশীদের থেকে তিনি জেনেছিলেন, ঘটনার দিন জোড়পুরি পলাশুলি থেকে চুরুলিয়ায় নিজের বাড়ি ফেরার পথে কয়েক জন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন মধুসূদনবাবু। তারাই তাঁকে খুন করে দেহ লোপাট করে দিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। মাধবীদেবী বলেন, “ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে পারলেও শান্তি হত।”
এ ব্যাপারে তাঁরা শুধু জামুড়িয়া থানায় অভিযোগ নয়, রাজ্য পুলিশের আইজি-কেও চিঠি লিখেছিলেন। এ ছাড়াও চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে প্রণববাবু চিঠি দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্ঞানী জৈল সিংহকে। কিন্তু ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। সেই সময়ে আসানসোলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন অসীমকুমার চট্টোপাধ্যায়। পরে সেই পদে আসেন বর্তমানে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী চৌধুরী মোহন জাটুয়া। ১৯৮১ সালের ৪ এপ্রিল মাধবীদেবীকে দেওয়া একটি শংসাপত্রে তিনি জানান, মধুসূদনবাবুর দেহ উদ্ধার হয়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।
তবে ঘটনার কিনারা এখনও হয়নি। চঞ্চলবাবু অভিযোগ করেন, কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। মামলাটি আদালতেও যায়নি। চঞ্চলবাবুর দাবি, “রাজ্যে পালাবদলের পরে পুরনো অনেক মামলার নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ হচ্ছে। আমরা চাই, বাবার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনারও তদন্ত হোক। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে চিঠি দিয়েছি।” শুক্রবার তাঁরা যোগাযোগ করছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গেও। কমিশনারেটের তরফে আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল)-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। চঞ্চলবাবু জানান, শীঘ্রই তাঁরা যোগাযোগ করবেন। আইনমন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “অনেক অজানা রহস্যের অনুসন্ধান হবে। সবগুলিই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” |