নামেই তালপুকুর, কিন্তু ঘটি ডোবে না।
সদ্য ‘জেলা’স্তরের ঘোষিত ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে মহকুমাস্তরের পরিকাঠামোও নেই! এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যত ‘ভগবান’ হওয়ার পরামর্শ দিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে ভারপ্রাপ্ত সুপার সুদীপ কাঁড়ার ও হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাকে পাশে বসিয়ে চন্দ্রিমাদেবীর মন্তব্য, “ঈশ্বরের পরেই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্থান। যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক, তার মধ্যেই সাধ্যমতো পরিষেবা দিতে হবে।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গত এক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করছি। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালেও রুটিন-ভিজিটে এসেছি। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যা দেখলাম সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেব।” |
‘নেই’-এর দীর্ঘ তালিকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে চন্দ্রিমাদেবীর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের মানুষের স্বাস্থ্য-পরিষেবার ব্যাপারে যে ধরনের পদক্ষেপ করা জরুরি ছিল তা আগের সরকার করেনি। স্বাস্থ্যজেলার ভাবনাটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই মতো ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লকের মানুষ জনকে উন্নততর পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা হয়েছে।” মন্ত্রীর দাবি, “দ্রুততার সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হচ্ছে।” সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, “রোগীরা উপযুক্ত পরিষেবা পাবেন। জেলা হাসপাতালে যা-যা থাকা প্রয়োজন নিশ্চিত ভাবেই এখানেও সে সব হবে।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝাড়গ্রাম হাসপাতলের উন্নয়নের জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর ৪৯ লক্ষ টাকা দিয়েছে। আরও ৪৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে চলেছে ওই দফতর। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীর অর্ধেক পদ পর্যন্ত শূন্য। শয্যাও অপ্রতুল। তা হলে কী ভাবে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব? চন্দ্রিমাদেবীর জবাব, “অন্য পরিষেবার থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা আলাদা। যতই বাধা-সমস্যা থাকুক, চিকিৎসক-নার্স-কর্মীদের সেবাব্রত নিয়ে কাজ করতে হবে। রাজ্য সরকার পাশে আছে।”
বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া ১১ টায় ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে পৌঁছন চন্দ্রিমাদেবী। সুপারের অফিসে প্রথমে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র, ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ তপনকুমার ব্যাপারী, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুদীপ কাঁড়ার, মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো ও শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে চন্দ্রিমাদেবী সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে আউটডোরে চিকিৎসকদের বসার নির্দেশ দেন। ‘গ্রুপ ডি’ কর্মী-সঙ্কটের বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মহকুমাশাসক। রোগী কল্যাণসমিতির মাধ্যমে চুক্তি-ভিত্তিক গ্রুপ-ডি কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপের জন্যও মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান মহকুমাশাসক। বৈঠকে মন্ত্রীকে শুনতে হয়, দু’বছর হাসপাতালের মর্গে সরকারি ডোম নেই। নেই অনেক কিছুই। তাঁর বিধানসভা এলাকার তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা চালুর দাবি জানান বিধায়ক চূড়ামণিবাবু। গোয়ালতোড়ের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবনে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প থাকায় সমস্যার কথা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে জানান শ্রীকান্ত মাহাতো। এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে মোট সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠকের পরে হাসপাতলের প্রসূতি বিভাগ, মেল মেডিক্যাল ও শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। রোগীদের জন্য দুপুরের খাবারে ভাতের পরিমাণ কম দেখে সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীদের ভর্ৎসনাও করেন তিনি। |